কৃষকের বাড়ির উঠানে পলিথিন শিট বিছিয়ে চলছে ব্যতিক্রমী পাঠদান। ২৫জন কৃষক-কৃষাণী মনোযোগ দিয়ে অংশ নিচ্ছেন একটি পার্টনার মাঠ স্কুলের ক্লাসে।
দিনাজপুরের খানসামায় মৌসুম ভিত্তিক এই স্কুলে নির্দিষ্ট ফসলের আধুনিক চাষাবাদ ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে হাতে-কলমে। এতে আধুনিক কৃষিতে দক্ষ হচ্ছেন কৃষক-কৃষাণীরা।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খানসামার আংগারপাড়া ইউপির পাকেরহাট পার্টনার ফিল্ড স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, রোপা আমন ধান বিষয়ে পলিথিন শিটে বসে হাতে-কলমে আধুনিক কৃষি বিষয়ে শিখছেন কৃষকেরা। পাঠদান করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
ক্লাসের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি অফিসার ইয়াসমিন আক্তার, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নাসিব আহমেদ খান ও মো. আল-মুক্তাদির এবং উপ-সহকারী কৃষি অফিসার জাহিদুল ইসলাম ও মমিনুল বিন আমিন।
জানা যায়, প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রোগ্রামের আওতায় খানসামার ৬টি ইউনিয়নে গত বছর রবি মৌসুমে ধান, গম, সরিষা, ডাল, নিরাপদ সবজি ও ফল চাষ এবং উত্তম কৃষি চর্চা বিষয়ে মোট ২৭টি স্কুলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চলতি মৌসুমে চলছে ১টি স্কুল কার্যক্রম। প্রতিটি মাঠ স্কুলে ১০টি পাঠে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে একদিন তিন ঘণ্টা করে চলে এসব ক্লাস। শুধু শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ না থেকে মাঠে বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে কৃষকদের রোগ-পোকামাকড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তা দমনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হচ্ছে। নির্বিচার বালাইনাশক ব্যবহার না করে কীভাবে নিরাপদ ও টেকসই চাষাবাদ সম্ভব, তা দেখানো হচ্ছে প্রতিদিনের ক্লাসে।
পাকেরহাট এলাকার কৃষক হাফিজুল ইসলাম, আতিয়ার রহমান, চৈতি রায় ও বিলকিস বেগম জানান, সময়ের সাথে চাষাবাদ পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। তাই কৃষি বিভাগের সহায়তায় পার্টনার স্কুলে ক্লাস করে আমরা নতুন ও আধুনিক পদ্ধতি শিখছি, যা বর্তমানে চাষাবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা যদুনাথ রায় বলেন, পার্টনার প্রকল্পের আওতায় মাঠ স্কুলগুলোতে ফসলের আধুনিক জাত নির্বাচন থেকে শুরু করে নিরাপদ উপায়ে অধিক ফলন নিশ্চিত করার কারিগরি জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করছে ও উৎসাহিত হচ্ছে।
খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, কৃষকদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে প্রতিদিন একজন করে কৃষককে দলনেতা করে পাঠদান পরিচালিত হয়। ক্লাসগুলো প্রাণবন্ত করতে নাট্যভঙ্গি, দলীয় কার্যক্রম ও অংশগ্রহণমূলক কৌশল অনুসরণ করা হয়। ফলে কৃষকেরা নিজেরাই নিয়মিত উৎসাহিত হচ্ছে এই ক্লাসে।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ