১৮ আগস্ট, ২০১৯ ২০:৪৩

ডেঙ্গু দমন নিয়ে দুই সিটির কার্যক্রমে হাইকোর্টের অসন্তোষ

অনলাইন ডেস্ক

ডেঙ্গু দমন নিয়ে দুই সিটির কার্যক্রমে হাইকোর্টের অসন্তোষ

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭০৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল শনিবার ১ হাজার ৪৬০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তার আগের দিন শুক্রবার এ সংখ্যা ছিল ১৭১৯। রবিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ফলে এই ডেঙ্গু দমনে দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ডেঙ্গু দমনে সময় মতো পদক্ষেপ নিলে এমন পরিস্থিতি হতো না। ডেঙ্গু নিধনে মানসিকতা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। কাগজে-কলমে সবকিছুই ঠিক আছে, আদতে ডেঙ্গু নিধনে কিছুই পুরোপুরি ঠিক নেই। মিডিয়ায় এসেছে কিছু কিছু হাসপাতালেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এ সংক্রান্ত শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন। এসময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম। 

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে আদালতের প্রশ্ন :
আজ রবিবার শুনানিকালে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা গেছে তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় দুই রকম তথ্য দেখছি। সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ৪৮ জন। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ৭২ জন। এটা নিয়ে দুই রকম তথ্য কেন? 

জবাবে ডিএজি বলেন, সরকারি হিসেবে ৪৮ জন। যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তাদের কারো কারো অন্য রোগ থাকতে পারে। কারো হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।
 
এসময় আদালত বলেন, ধরে নিচ্ছি ৪৮ জনই মারা গেছে। যারা মারা গেছে তাদের পরিবারের কি অবস্থা তা একবার ভেবে দেখুন। ডেঙ্গু এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। যথাসময়ে যদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে হয়তো এত লোককে মরতে হতো না। 

আদালত বলেন, শরীয়তপুর থেকে একজন ঢাকায় সেবা দিতে এসে মারা গেছে। সে যদি গ্রামে থাকতো তাহলে হয়তো তাকে মরতে হতো না। 

সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমে অসন্তোষ :
আদালত বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা সতর্ক করেছিলাম। দুই সিটির সচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের আদেশের পর দুই সিটির কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকে যে ধরণের কথাবার্তা শুনলাম তা কারো কাম্য নয়। 

আদালত বলেন, ডেঙ্গু এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার বা দুই সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যথাসময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এটা নিলে হয়তো এরকম পরিস্থিতি হতো না। যাদের সঠিকভাবে বিষয়টি তদারকি করার দাযিত্ব ছিল তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে।  

আদালত বলেন, ডেঙ্গু মশার লার্ভা ও ডিম থাকে পানিতে। উনারা সেটা পরিষ্কার না করে রাস্তায় ময়লা ফেলে পরিষ্কার করলেন। এটা নেহায়েতই হাস্যকর। 

আদালত বলেন, কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বছরের পর বছর একই ওষুধ ছেটানো হচ্ছে। অথচ ওই ওষুধে কাজ হচ্ছে না। একটি ওষুধ বারবার ব্যবহার করলে তা সহনীয় হয়ে যায়। এটা বুঝতে হবে। দেখুন না, এখন অ্যারোসল আর ঠিকমতো কাজ করে না। এসময় একজন আইনজীবী বলেন, অ্যারোসলে মশা মরে না।

আদালত বলেন, নিজেরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে জনগণের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। জনগণকে তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে বলা হচ্ছে। সত্যিকারে যেখানে এডিস মশা থাকে সেখানে ওষুধ ছেটালেই তো হয়। জনগণকে সচেতন হতে হবে-এটা ঠিক। কিন্তু সব দায় জনগণের- এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করতে গেলে আদালত বলেন, আমরা তো কোনো রুল জারি করিনি। আরেকটি আদালত রুল দিয়েছে। সেখানে রিপোর্ট দিন। 

এসময় ডিএজি বলেন, এই আদালত মৌখিকভাবে এক আদেশে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ জানতে চেয়েছিলেন। তাই সরকার বিষয়টি জানিয়েছে। 

তিনি সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, সরকার এটা নিয়ে খুবই আন্তরিক। সকল সরকারি হাসপাতালে সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানিতে শুল্ক মুক্ত করা হয়েছে। ১০টি সার্ভিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, এরই মধ্যে ৪০টি হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। যেসব হাসপাতাল সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছে তাদের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

আদালত বলেন, এটা নিয়ে আমরা কোনো আদেশ দিচ্ছি না।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর