দেশে আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে ডেঙ্গু। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এবারই সব থেকে বেশি। সিলেটে এখন পর্যন্ত কেউ মারা না গেলেও গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন আড়াই শতাধিক। এই অবস্থায়ও সিলেট মহানগরে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মশাকে। দিনরাত মশা কামড়াচ্ছে নগরবাসীকে। যত্রতত্র মিলছে ডেঙ্গুবাহী মশা এডিসের লার্ভাও। এতে সিলেটে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।
জানা গেছে, সিলেট মহানগরের ৪২টি ওয়ার্ডেই কমবেশি এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য শাখা। নগরবাসী অভিযোগ করছেন- সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মহানগরের নালা-নর্দমাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। সন্ধ্যার পর মশার যন্ত্রণায় টেকা যায় না। এমনকি দিনের বেলাও মানুষ মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। বাসাবাড়ি, নালা-নর্দমা ও বিভিন্ন স্থাপনায় পানি জমে থাকলেও তা অপসারণ করা হচ্ছে না। তবে সিসিক কর্তপক্ষ বলছে- লোকবল সংকটের কারণে পুরোপুরিভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
মহানগরের আখালিয়া নতুনবাজার, আখালিয়া, কালীবাড়ি, পনিটুলা, উপশহর, কালীঘাট, নবাব রোড, ঘাসিটুলা, বেতেরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনা স্তূপাকারে পড়ে আছে। এ ছাড়া মহানগরের অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানে নালা-নর্দমা উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন পরিত্যক্ত জলাশয় ও ফোয়ারায় এডিস মশা জন্মাচ্ছে। এসব স্থানই মশার প্রজননক্ষেত্র বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মন্তব্য।
সিসিকের পরিচ্ছন্নতা শাখা জানায়- সিটি করপোরেশনে যে সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন, তা পর্যাপ্ত নয়। মহানগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডেই কেবল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি এখন নিয়মিত চলে। এর বাইরে সিটিতে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডে এখনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ৪৭৬ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছেন। অথচ নগর নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখতে সব মিলিয়ে অন্তত ৭০০ কর্মী প্রয়োজন।
লোকবলের তীব্র সংকট থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা অপসারণে কাজ চলছে উল্লেখ করে সিসিকের পরিচ্ছন্নতা শাখার প্রধান হানিফুর রহমান বলেন- প্রতিদিনই বর্জ্য অপসারণ করা হয়। ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুরে সিটি করপোরেশন পরিষদের সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে। একেক দিন একেক ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালালেও তাতে কার্যকর ফলাফল নিশ্চিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় একযোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিতেই মূলত সাধারণ পরিষদের সভা ডাকা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রয়োজনীয় লোকবল সংকটে মশার লার্ভা ধ্বংসে ব্যবস্থা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। করপোরেশনে একজন কীটতত্ত্ববিদ নেই। এ ছাড়া মশকনিধনকর্মী রয়েছেন মাত্র তিনজন। তবে প্রতিদিন দৈনিক মজুরিতে ৪০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়ে ৬টি স্থানে মশকনিধনের জন্য তাঁদের দিয়ে স্প্রে ও ফগার মেশিন দিয়ে কাজ করানো হয়। এর বাইরে ১২ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে লার্ভার অনুসন্ধান করছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিরোধে শনিবার (৫ আগস্ট) থেকে মহানগরের সব কটি ওয়ার্ডে একযোগে মশক নিধনের ওষুধ ছিটাতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সচেতনতা তৈরিতে মাইকিংয়ের পাশাপাশি প্রচারপত্রও বিতরণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ