চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ কমাতে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়েছে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম। এর মধ্যে নতুন ট্যারিফ সমস্যার সমাধান না হলে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার নগরীর নেভি কনভেনশন হলে বন্দরের বিভিন্ন সেবায় অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সভায় এই আলটিমেটাম দেওয়া হয়। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রবেশ ফি অন্তত পাঁচগুণ বাড়ানোর প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে পণ্য পরিবহণ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। শনিবার সকালে কদমতলীতে আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলেনে ঘোষণা দেওয়া হয়। একই ইস্যুতে গত ১৫ অক্টোবর থেকে কনটেইনার বহনকারী লরি চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক -শ্রমিকরা। লরির পর আন্দোলনে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানও যুক্ত হল। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ। একইসঙ্গে কনটেইনার ও খালাস করা পণ্য বন্দরের বাইরে (ডেলিভারি) নিতে পারছেন না আমদানিকারকরা। এ কারণে কনটেইনার জটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে সীমিত আকারে রপ্তানি পণ্য বন্দরে প্রবেশ করছে বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ সভায় পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহবায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নতুন ট্যারিফ কাঠামো স্থগিত করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। এ সমস্যা সমাধানে যদি সরকার মনোযোগ না দেয় তাহলে ব্যবসায়ীরা আর বেশিদিন অপেক্ষা করবে না। একটা কর্মসূচি আমাদেরকে অবশ্যই দিতে হবে। সেইজন্য কর্মসূচি ঘোষণা করছি। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন রবিবার (আজ) থেকে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবে। এছাড়া এক সপ্তাহের মধ্যে যদি ট্যারিফের সমাধান না হয়, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এসএম আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক, বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এমএ সালাম, পরিচালক এমডিএম মহিউদ্দিন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম, শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. পারভেজ আকতার প্রমুখ।
এতে বক্তারা বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়া গত ১৫ অক্টোবর থেকে বন্দরে গড়ে ৪১ শতাংশ চার্জ বাড়ানো হয়েছে। কোনো কোনো খাতে এ চার্জ আরও অনেক বেশি।
আমিরুল হক বলেন, বন্দরে ট্যারিফ বাড়াতে হলে সবার সঙ্গে বসেন। কোন জায়গায় ট্যারিফ বাড়াতে হবে ঠিক করেন। স্টেক হোল্ডারদের ডাকেন। নতুন ট্যারিফ বা কোনো কারণে বন্দর বন্ধ হলে যারা এটা করেছে, তারা দায়ী থাকবে। আমরা দায়ী থাকব না।
এমএ সালাম বলেন, ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। ৮৫ শতাংশ আমদানি রপ্তানি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। বন্দরের নতুন ট্যারিফে ব্যবসায়ীরা ইনসিকিউরড ফিল করছেন। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সমস্বরে না বললে সমাধান হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর সেবাখাত। লসে নেই। তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কেন এত কারসাজি। ট্রেইলার ধর্মঘট শুরু হয়েছে, আমাদের কনটেইনার যাবে না। এসবের দায়-দায়িত্ব কে নেবে।
এমডিএম মহিউদ্দিন বলেন, বন্দরে ট্যারিফ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটে গেছে। নতুন ট্যারিফে ব্যবসায়ীরা প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল