মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

আজও অমর আবদুল আলীমের কালজয়ী সেই সব গান

আলী আফতাব

আজও অমর আবদুল আলীমের কালজয়ী সেই সব গান

পল্লীসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী আবদুল আলীমের ৯০তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আবদুল আলীম বাংলা লোকসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী। পল্লীগীতি, ভাটিয়ালি, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদী, ইসলামী-এসব গানের শিল্পী হিসেবে আজও তিনি অপ্রতিদ্ব›দ্বী। কণ্ঠস্বরের অসাধারণ ঐশ্বর্য নিয়ে তিনি জন্মেছিলেন। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সংগীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক। খুব অল্প বয়স থেকেই শিল্পী গান গেয়ে নাম করেছিলেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁর গানের প্রথম রেকর্ড হয়। কোনো শিক্ষকের কাছে গান শেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি। তিনি অন্যের গাওয়া গান শুনে গান শিখতেন। আর বিভিন্ন পালা পার্বণে সেগুলো গাইতেন। ১৯৪২ সাল। উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়েছে। শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হক এলেন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায়। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বড় ভাই শেখ হাবিব আলী আবদুল আলীমকে নিয়ে গেলেন সেই অনুষ্ঠানে। শিল্পী ধীরপায়ে মঞ্চে এসে গান ধরলেন, ‘সদা মন চাহে মদিনা যাব।’ মঞ্চে বসে আবদুল আলীমের গান শুনে ‘শেরে বাংলা’ শিশুর মতো কেঁদে ফেললেন। কিশোর আলীমকে জড়িয়ে নিলেন তাঁর বুকে। উৎসাহ দিলেন, দোয়া করলেন এবং তখনই বাজারে গিয়ে পাজামা-পাঞ্জাবি, জুতা, পুটি, মোজা সব কিনে দিলেন। এই হচ্ছেন আবদুল আলীম। তাঁর গানে আপ্লুত হননি এমন লোক বিরল। তাঁর কিছু অবিস্মরণীয় গান-নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা, সর্বনাশা পদ্মা নদী, হলুদিয়া পাখী, মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম, এই যে দুনিয়া, দোল দোল দুলনি, দুয়ারে আইসাছে পালকি, কেন বা তারে সঁপে দিলাম দেহ মন প্রাণ, মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায় ইত্যাদি।

১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের এক মাস আগে আবদুল আলীম কলকাতা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে এলেন। ওই বছরেই ডিসেম্বর মাসে ঢাকা এলেন। পরের বছর ঢাকা বেতারে অডিশন দিলেন। অডিশনে পাস করলেন। ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসের ৯ তারিখে তিনি বেতারে প্রথম গাইলেন, ‘ও মুর্শিদ পথ দেখাইয়া দাও।’ এরপর পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের সঙ্গে আবদুল আলীমের পরিচয় হয়। কবি জসীমউদ্দীন তাঁকে পাঠালেন জিন্দাবাহার দ্বিতীয় লেনের ৪১ নম্বর বাড়িতে। এক সময় দেশের বরেণ্য সংগীত গুণী শিল্পীরা এখানে থাকতেন।

এখানে তিনি প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ মমতাজ আলী খানের কাছে তালিম গ্রহণ করেন। মমতাজ আলী খান আবদুল আলীমকে পল্লীগানের জগতে নিয়ে এলেন। পরবর্তীতে তিনি কানাই শীলের কাছে সংগীত শিক্ষা লাভ করেন।  বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আবদুল আলীম গান করেছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রটি হলো ‘লালন ফকির’। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০টির মতো গান রেকর্ড হয়েছিল তাঁর। জাদুকরী কণ্ঠের অধিকারী আবদুল আলীম জীবদ্দশায় ও মরণোত্তর বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে ‘একুশে পদক’, ‘পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার’ এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্স, লাহোরে সংগীত পরিবেশন করে আবদুল আলীম পাঁচটি স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করে। কালজয়ী এই লোকসংগীত শিল্পী মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ভক্তকুলকে কাঁদিয়ে পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ আবদুল আলীম নেই। আছে তাঁর গান। তাঁর গানের মাঝে তিনি সংগীত পিপাসু জনগণ তথা পল্লীগ্রামের মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।

 

এখনো বাবার নামে কোনো স্থাপনার নামকরণ করা হয়নি : নূরজাহান আলীম

আজ পল্লীসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী আবদুল আলীমের ৯০তম জন্মবার্ষিকী। এ দিনটিকে ঘিরে অনেক প্রস্তুতি ছিল নূরজাহান আলীমের। কিন্তু করোনার কারণে কিছুই করা হচ্ছে না এবার। তারপরও দেশ টিভিতে ‘প্রিয়জনের গান’-এর অনুষ্ঠানে থাকছেন তারা তিন ভাইবোন। এ প্রসঙ্গে নূরজাহান আলীম বলেন, ‘৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এবার বেশ কিছু পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে কিছুই করা হচ্ছে না। শুধু ৩০ জুলাই দেশটিভিতে  আমরা তিন ভাইবোন বাবার কিছু গান পরিবেশন করব। কিন্তু আমাদের একটি কষ্ট  আছে, আর তা হলো, এতদিনেও বাবার নামে কোনো স্থাপনার নামকরণ করা হলো না। এ ছাড়া বাবার নামে ডাকটিকিট প্রকাশ করার কথা ছিল, যা এখনো হযনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাবার ইসলামী ও নদীর গানগুলো নিয়ে নতুন কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ 

সর্বশেষ খবর