অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহি, পরীমণি, বুবলীর পর গত কয়েক বছরে চলচ্চিত্রে অনেক নায়িকাই এসেছেন এবং অভিনয় দিয়ে এদের মধ্যে বেশির ভাগই দর্শক নজর কেড়েছেন। কিন্তু শাকিব খান, শুভ, বাপ্পী, সাইমনের পর তেমনভাবে নতুন নায়ক আসেননি। যারা এসেছেন তারাও খুব একটা সাড়া জাগাতে পারেননি। নতুন নায়িকাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- আরিয়ানা জামান সিনেমা ‘পাপ’ দিয়ে ঢালিউডে পা রাখেন। চিত্রনায়ক নিরবের সঙ্গে ‘স্পর্শ’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন আরিয়ানা। বেশ কয়েক বছর মডেলিং করেছেন। এ ছাড়া ওয়েব ফিল্ম ‘মহানগর টু’তেও দেখা গেছে তাকে এবং তার অভিনয় প্রশংসা কুড়ায়। জান্নাতুল ঐশী ‘রাত জাগা ফুল’ সিনেমা দিয়ে পরিচিতি পান। এ ছাড়া ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমা দিয়েও বেশ পরিচিতি এসেছে ঐশীর। ‘আদম’ নামের একটি সিনেমায়ও কাজ করেছেন। এছাড়া ‘মিশন এক্সট্রিম-টু’ সিনেমার নায়িকাও তিনি। শাহনাজ সুমি আলোচিত পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘পাপ পুণ্য’ সিনেমা দিয়ে ঢাকাই সিনেমায় অভিষেক ঘটে শাহনাজ সুমির। ‘দামাল’ নামের আরেকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মন্দিরা তার ক্যারিয়ারে প্রথম সিনেমা ‘কাজল রেখায়’ অভিনয় করে দর্শক নজর কেড়েছেন। নভেরা রহমান অমিতাভ রেজা পরিচালিত ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করে প্রথম সিনেমাতেই পরিচিতি অর্জন করেন। নাজিফা তুষির প্রথম ছবি ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’। এ ছবিটি নায়িকা হিসেবেও তাকে পরিচিতি এনে দেয়। ‘হাওয়া’ ছবির নায়িকা হয়েও অল্প সময়ে ব্যাপক পরিচিতি পান। তুষির ছবির ঝুলিতে রয়েছে ‘সিন্ডিকেট’, ‘আইসক্রিম’ ও ‘স্কুটি’সহ বেশকটি ফিল্ম এবং ওয়েবফিল্ম। ‘সোনার চর’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথম বড় পর্দায় অভিষেক স্নিগ্ধার। একই নির্মাতার ‘সুবর্ণভূমি’ নামের আরেকটি সিনেমায় কাজ করেছেন। দুটি সিনেমায়ই কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন নবীন এই নায়িকা। এ ছাড়া ‘পাপী’ নামে আরও একটি ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। প্রয়াত সাইদুল আনাম টুটুলের ‘কালবেলা’ সিনেমায় অভিষেক তাহমিনা অথৈর। অথৈ মানিক মানবিকের ‘আজব ছেলে’ ছবিতে অভিনয় করেন। এ ছাড়া রায়হান আনোয়ারের পরিচালনায় ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’ ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। সামিনা বাশার ২০১৯ সাল থেকে ছোট পর্দায় কাজ শুরু করেন। অপারেশন সুন্দরবন সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষিক্ত হয়েছেন। জাজ মাল্টিমিডিয়ার দুটি সিনেমায় কাজ করেছেন। এগুলো হলো- ‘মোনা জ্বীন টু’ ও ‘মাসুদ রানা’। এ ছাড়া ‘বারুদ’ সিনেমায়ও দেখা যাবে তাকে। ‘চন্দ্রাবতী কথা’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দিলরুবা দোয়েল এবং প্রশংসা পেয়েছেন। এরপর তাকে দেখা যায় জাজের সিনেমা ‘পটু’তে।
নতুন নায়ক কেন তৈরি হচ্ছে না
কমপক্ষে ২০০৮ সাল থেকে ঢাকাই চলচ্চিত্র ‘এক নায়ক’-নির্ভর হয়ে পড়েছে। ২০০৮ সালে নায়ক মান্নার মৃত্যুর আগে সালমান শাহ, মান্না, রিয়াজ, ফেরদৌস, ওমর সানী, অমিত হাসান, আমিন খানদের নিয়ে নির্মাতারা চোখ বন্ধ করে ছবি বানাতেন এবং তাদের ছবি দেখতে দর্শক সিনেমা হলে ভিড় জমাত। কিন্তু উল্লিখিত বছরে নায়ক মান্না অকালে মারা গেলেন ও রিয়াজসহ অন্য নায়করা ধীরে ধীরে অভিনয় থেকে দূরে সরতে থাকেন। এতে তখন থেকেই দেশীয় চলচ্চিত্র শাকিব খানের দখলে চলে যায়। কারণ শাকিবের পাশাপাশি অনেক নায়কই তার আগে-পরে চলচ্চিত্রের অভিনয়ে এলেও খুব একটা দর্শকমন মাতাতে পারেননি তারা। এমন মন্তব্য চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাসের। এ চলচ্চিত্র কর্মকর্তার কথার বেশ ধরেই কয়েকজন চলচ্চিত্রকারের কাছে জানতে চাইলাম কেন নতুন নায়ক তৈরি হচ্ছে না? এর জবাবে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ছটকু আহমেদ বলেন, এখন যারা অভিনয়ে আসছে তারা শুরুতেই সহজে অর্থবিত্ত আর খ্যাতি পেতে চায়। কেউ অভিনয় শিখেও আসছে না বা শেখার প্রতি কারও আগ্রহও নেই। মূলত এ কারণে নায়ক হিসেবে অনেককে ব্রেক দিলেও শুরুতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে তারা।
আরেক খ্যাতিমান সিনিয়র নির্মাতা মতিন রহমানের কথায়- আগে কাজের প্রতি শিল্পীদের যে ডেডিকেশন ছিল তা এখন কোথায়? এর জন্য নির্মাতারাও দায়ী। তারা দায়সারাগোছের কাজ করেন বলে নতুন যারা অভিনয়ে আসছে তারা ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে নতুন নায়ক-নায়িকা আর তৈরি হচ্ছে না। প্রখ্যাত নির্মাতা কাজী হায়াৎ বলেন, এখন যারা এ অঙ্গনে আসছে তাদের মধ্যে অভিনয়ে পূর্ব প্রস্তুতি কিংবা নায়কোচিত চেহারা ও আচরণ নেই। ফলে দর্শক গ্রহণযোগ্যতার অভাবে এক-দুটি সিনেমার পরই হারিয়ে যায় তারা। এদিকে ২০১০ সাল থেকে ঢাকাই চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আরিফিন শুভ, সাইমন, বাপ্পী, রোশান, সিয়াম, শিপন মিত্র, ইয়াস রোহন, আদর আজাদ, জয় চৌধুরীসহ বেশ কিছু নতুনের অভিষেক ঘটলেও এদের মধ্যে প্রথমদিকে বাপ্পী, শুভ, সিয়াম কিছুটা স্বস্তি এনে দিলেও তাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা তেমনভাবে আর চোখে পড়ছে না। আদর আজাদের ‘যাও পাখি বলো তারে’, ‘তালাশ’, ‘লিপিস্টিক’সহ নামি প্রোডাকশন হাউসের বড় মাপের কয়েকটি ছবি দর্শক ও নির্মাতাদের মধ্যে সাড়া জাগায়। জাজ মাল্টিমিডিয়ার হাত ধরে বাপ্পীর অভিষেক হওয়ার পর এ প্রতিষ্ঠানের ছবিগুলো তার ক্যারিয়ারের জন্য আশীর্বাদ ছিল। পরে জাজ থেকে বেরিয়ে গেলে বাপ্পী হয়ে পড়েন অ্যাভারেজ নায়ক। সিয়ামও জাজের ‘পোড়ামন টু’, ‘দহন’ দিয়ে আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত ফিকে হয়ে পড়েছেন। রোশান ও শিপন কোনোভাবেই দাঁড়াতে পারছেন না। তবে সাইমনকে ভাগ্যবান বলা যায়। অভিনয়ের প্রতি তার নিষ্ঠা তাকে ক্যারিয়ারের স্বল্প সময়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেতার সম্মান এনে দিয়েছে।