বাংলাদেশের অভিনয় জগতে মঞ্চনাটক এক শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। বহু গুণী অভিনয়শিল্পী তাঁদের অভিনয় জীবন শুরু করেছেন থিয়েটারের মঞ্চ থেকে এবং পরবর্তীতে বড়পর্দায় অসামান্য সাফল্য অর্জন করেন। সেসব তারকা অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে লিখেছেন - পান্থ আফজাল
ফেরদৌসী মজুমদার
অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, যিনি স্বাধীনতা-উত্তরকাল থেকে টিভি ও মঞ্চে সমান সফলতার সঙ্গে অভিনয় করে আসছেন। সবার প্রিয় হুরমতি ১৯৭২ সালে গঠিত ‘থিয়েটার’র হয়ে অসংখ্য মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘মায়ের অধিকার’, ‘দমকা’, মেঘলা আকাশ, দরিয়া পাড়ের দৌলতি, আগন্তুক এবং ‘ফ্রম বাংলাদেশ’ (নির্মাণাধীন)।
হুমায়ুন ফরীদি
ঢাকা থিয়েটারের অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রেও দারুণ সফল। কানকাটা রমজান চরিত্রে তুমুল জনপ্রিয় এ তারকা করেছেন ভন্ড, সন্ত্রাস, হুলিয়া, শ্যামল ছায়া, একাত্তরের যীশু, পালাবি কোথায়, বাংলার কমান্ডো, আনন্দ অশ্রু, মাতৃত্ব, ম্যাডাম ফুলি, রাঙা বউ, ব্যাচেলর, আহা, মেহেরজান, এক কাপ চা, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, জুম্মন কসাই, পাগলা ঘণ্টা।
আবুল হায়াত
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় থিয়েটারের কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল হায়াত টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে অনবদ্য। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্র অরুণোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী, তিতাস একটি নদীর নাম, মাস্টার মশাই, সূর্য সন্তান, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অবুঝ দুটি মন, আগুনের পরশমণি, স্বপ্নের ঠিকানা, রূপকথার গল্প, দারুচিনি দ্বীপ, গহীনে শব্দ, অজ্ঞাতনামা, ফাগুন হাওয়ায়।
সারা যাকের
সারা যাকেরের অভিনয় শুরু মঞ্চনাটক থেকে। তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে প্রায় ১ হাজারেরও বেশি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘বাকী ইতিহাস’ নাটকে কণার চরিত্র। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা খুবই কম। তিনি তাঁর নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বেশি সময় দেন, তাই অভিনয় কম করেন। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘অন্তর্যাত্রা’ ও ‘এই মুহূর্তে’।
আলী যাকের
নাটক-চলচ্চিত্রে আলী যাকের একজন বহুমুখী অভিনেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি তাঁর শক্তিশালী অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন এবং পরে বড়পর্দায় নানাবিধ চরিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ১৯৭২ সালে আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটক করেন। মঞ্চের এই গ্যালিলিও অভিনয় করেছেন আগামী, লালসালু, নদীর নাম মধুমতী, রাবেয়া প্রভৃতি।
আফজাল হোসেন
স্বনামধন্য অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রশিল্পী এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতা আফজাল হোসেন। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থিয়েটারে অভিনয়ের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ঢাকা থিয়েটারের একজন। তিনি বক্স অফিস হিট করা ‘দুই জীবন’, ‘নতুন বউ’, ‘পালাবি কোথায়’, ঢাকা অ্যাটাকে অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত ‘যাপিত জীবন’ ও পরিচালিত ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’ রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়।
তৌকীর আহমেদ
সফল টিভি-চলচ্চিত্র পরিচালক, নাট্যকার-অভিনেতা তৌকীর আহমেদ। ‘নাট্যকেন্দ্র’র সদস্য তৌকীর লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট থিয়েটার থেকে মঞ্চনাটক পরিচালনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। অভিনীত সিনেমা ‘নদীর নাম মধুমতী’, লাল সালু, রূপকথার গল্প, প্রিয়তমেষু, জালালের গল্প, কমলা রকেট, বিউটি সার্কাস প্রভৃতি। তাঁর পরিচালিত ছবি জয়যাত্রা, রূপকথার গল্প, দারুচিনি দ্বীপ, অজ্ঞাতনামা, হালদা, ফাগুন হাওয়ায়, স্ফুলিঙ্গ।
বিপাশা হায়াত
বিপাশা হায়াত এক প্রতিভাবান শিল্পী, যিনি মঞ্চনাটক থেকে শুরু করে বড়পর্দার স্বাধীন চলচ্চিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর মঞ্চে যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৫ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের মাধ্যমে। তিনি অভিনয় ছাড়াও সেট ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর অভিনীত দুটি চলচ্চিত্র হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’ ও তৌকীর আহমেদের ‘জয়যাত্রা’।
জাহিদ হাসান
জনপ্রিয় অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক জাহিদ হাসান। তিনি সিরাজগঞ্জ তরুণ সম্প্রদায় নাট্যদলের হয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশন ছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়েও অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্র শ্রাবণ মেঘের দিন, মেড ইন বাংলাদেশ, আমার আছে জল, প্রজাপতি, হালদা, বিজলী, সাপলুডু, মাফিয়া, উৎসব। তিনি আরও ছবিতে অভিনয় করেছেন।
তারিক আনাম খান
‘নাট্যকেন্দ্র’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তারিক আনাম খান একজন অসাধারণ অভিনেতা, পরিচালক এবং প্রযোজক। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্র ঘুড্ডি, দেশা : দ্য লিডার, লাল সবুজের পালা, সুরুজ মিয়া, আমার ঘর আমার বেহেশত, জয়যাত্রা, আহা, মেড ইন বাংলাদেশ, দ্য লাস্ট ঠাকুর, ঘেটুপুত্র কমলা, জোনাকির আলো, সুপার হিরো, আবার বসন্ত, পেয়ারার সুবাস, উৎসব, রাজকুমার, নোলক, সাপলুডু, জাগো প্রভৃতি।
শহীদুজ্জামান সেলিম
শহীদুজ্জামান সেলিম তাঁর অভিনয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। মঞ্চনাটক থেকে শুরু করে তিনি বড়পর্দায়ও এক শক্তিশালী উপস্থিতি তৈরি করেছেন। ঢাকা থিয়েটার থেকে আসা এ অভিনেতা- মেড ইন বাংলাদেশ, চোরাবালি, দেবদাস, মেঘমল্লার, অজ্ঞাতনামা, পরাণ, প্রিয়তমা, ওমর, সুড়ঙ্গ, জংলি, বরবাদ, দাগি, তাণ্ডব ইত্যাদি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
মোশাররফ করিম
অভিনেতা মোশাররফ করিমের থিয়েটার যাত্রা শুরু ‘নাট্যকেন্দ্র’র মাধ্যমে। তাঁর প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র জয়যাত্রা। পরবর্তীতে তিনি রূপকথার গল্প, দারুচিনি দ্বীপ, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, প্রজাপতি, টেলিভিশন, জালালের গল্প, অজ্ঞাতনামা, হালদা, কমলা রকেট, হুব্বা, ডিকশনারি, চক্কর ৩০২, মুখোশ, দাগ, দি ডিরেক্টর করেছেন। বিলডাকিনী, গাঙকুমারী, বৈদ্য মুক্তি প্রতীক্ষিত।
আরও যাঁরা
চঞ্চল চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবু, মামুনুর রশীদ, আজাদ আবুল কালাম, সানজিদা প্রীতি, সোহেল মন্ডল, শাহানা সুমি, ড. এনামুল হক, লাকী ইনাম, হৃদি হক, জুয়েল জহুর, তানজিকা আমিন, জয়া আহসান, আফসানা মিমি, আসাদুজ্জামান নূর, মাসুদ আলী খান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, জাকিয়া বারী মম, কাজী নওশাবা, মোহসিনা আক্তার, নায়লা আজাদ নূপুর, আবদুল্লাহ আল-মামুন, আল মনুসর, আতাউর রহমান, রামেন্দু মজুমদার, মজিবুর রহমান দিলু, রোজী সিদ্দিকী, অপি করিম, মাহফুজ আহমেদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, গাজী রাকায়েত প্রমুখ।