সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের অদক্ষতা ও অদূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে বার বার হোঁচট খাচ্ছে এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে আবারও জটিলতা দেখা দেওয়ায় প্রকল্পের সর্বশেষ কিস্তির টাকাও ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অভিযোগ চলচ্চিত্রকারদের।
২০১১ সালে এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে একনেকের বৈঠকে ৫৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। অর্থ বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী তিন অর্থবছরে তিন কিস্তিতে এ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে হিসাবে প্রথম কিস্তি অর্থাৎ ২০১১-১২ অর্থবছরের টাকা পাওয়া যায় ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে। প্রথম কিস্তির অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে দুটি ক্যামেরা কেনার জন্য ধরা হয়েছিল ৬ কোটি টাকা। কিন্তু টেন্ডার ড্রপকারী প্রতিষ্ঠানটির কাগজপত্রে ক্যামেরা ও ডেলসোমিটার মেশিন সম্পর্কে অসামঞ্জস্য তথ্য থাকায় এফডিসি এ দুটি বিষয়ের টেন্ডার বাতিল করে এবং সংশ্লিষ্ট অর্থ সরকারের কাছে ফেরত যায়। এফডিসি জানায়, টেন্ডার ড্রপের পরে ক্যামেরা ও ডেলসোমিটার মেশিনের অর্থ বাদ দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার একটি চেক নেওয়া হয়। এ টাকার মধ্যে কালার এনালাইজার মেশিন, প্রিন্টিং মেশিন, মাইক্রোবাস এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ খরচ হয়েছে তিন কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বাকি ৪৭ লাখ টাকা সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। এফডিসির একটি সূত্র জানায়, প্রথম অর্থবছরের টাকা দিয়ে সবকিছু কেনা সম্ভব হতো। কিন্তু বেশ কিছু সমস্যার কারণে ওই অর্থবছরের কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। এসব সমস্যার মধ্যে ছিল এক বছরের স্থলে মাত্র ছয় মাস সময় পাওয়া, হঠাৎ করে দুই দফা এমডি পরিবর্তন, প্রজেক্ট পরিচালক (কারিগরি) সাঈদ নূর আলমের ট্রেনিংয়ে চলে যাওয়া ইত্যাদি। পরে ২০১২-১৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ অর্থ দিয়ে দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা, একটি কালার গ্রেড সুট মেশিন, একটি ডিজিটাল এডিটিং মেশিন ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনার কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় তাও যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়নি। এ বিষয়ে এফডিসির প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম চলতি বছরের জানুয়ারিতে বলেছিলেন, আর কোনো জটিলতা নেই। ২০১৪ সালের মধ্যেই এফডিসিকে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে ডাবিং, প্রিন্টিং মেশিন, লাইট, কালার অ্যানালাইজারের যন্ত্রাংশ এসে পৌঁছেছে। ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে যন্ত্রাংশগুলো আমদানি করেছে আরটিআই নামক একটি প্রতিষ্ঠান। অল্প সময়ের মধ্যে আসছে ডিজিটাল এডিটিং মেশিন, তিনটি ক্যামেরা ও সেন্টার স্টোর সিস্টেম। এতে ব্যয় হচ্ছে ১১ কোটি টাকা। তিনি জানিয়েছিলেন মার্চের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তার কথায় আগের অর্থ ফেরত গেলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পুনরায় ফান্ড রিলিজ করানো হয়েছে। সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময় জুন-২০১৪ থেকে ডিসেম্বর-২০১৪ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে।
কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে আবারও জটিলতা দেখা দিয়েছে। তাই সময়মতো কাজ শুরু বা শেষ করা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এসব জটিলতার মধ্যে রয়েছে হঠাৎ করে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করা এবং ডিজিটাল এডিটিং মেশিন ও স্টোর সিস্টেম আমদানির ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করা। জানা গেছে, গত মাসে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামের পরিবর্তে লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথকে ওই পদে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। শফিক জানান, যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনিয়মের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মন্ত্রণালয় অভিযোগ তদন্ত করছে। ক্যামেরার এলসি খোলা হলেও তা আমদানি করতে এক মাসেরও বেশি সময় লাগবে। এদিকে নতুন প্রকল্প পরিচালকের কাছে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করেও ফোনে তাকে পাওয়া যায়নি। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারলে আবারও অর্থ সরকারের কাছে ফেরত যাবে। তা ছাড়া সময় বৃদ্ধি করা সত্ত্বেও কাজ শেষ করতে না পারায় আবার প্রকল্পের কাজ শুরু করা কঠিন হবে।