মানসম্মত চলচ্চিত্রের অপেক্ষায় আছেন কিংবদন্তি শিল্পী শবনম ও রবিন ঘোষ। তাদের কথায়, আমরা হয় তো চলচ্চিত্রে আর আসব না। কিন্তু ভালো চলচ্চিত্র দেখে যেতে চাই।
শবনম চলচ্চিত্রে অভিনয় ও রবিন ঘোষ সংগীত পরিচালক হিসেবে খ্যাতি পান। পঞ্চাশের দশকে দুজনেরই চলচ্চিত্র জগতে আগমন। তারা স্বামী-স্ত্রী। বর্তমানে ভালো আছেন এই দুই খ্যাতিমান শিল্পী। বারিধারার বাসায় কাটছে তাদের অবসর জীবন। দুজনই দীর্ঘদিন রুপালি জগতে অনুপস্থিত। শবনম সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে অভিনয় করেন কাজী হায়াৎ পরিচালিত 'আম্মাজান' ছবিতে। আর রবিন ঘোষ সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের উর্দু ছবি 'দরিয়ান'-এ সংগীত পরিচালনা করেন।
সম্প্রতি পাকিস্তান টেলিভিশনের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন শবনম ও রবিন ঘোষ।
দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র থেকে দূরে কেন? রবিন ঘোষ বলেন, গানের ধরন পাল্টেছে। নতুন সংগীতকার ও শিল্পী এসেছে। তারা ভালো করছে। দীর্ঘদিন কাজ করলাম, দর্শকশ্রোতার অফুরন্ত ভালোবাসা পেলাম। এখন বয়স হয়েছে। শরীরটা খুব ভালো যাচ্ছে না। তাই কোথাও তেমন বের হই না। বাসায় টিভি দেখে, গান শুনে আর পত্রিকা পড়ে সময় কাটে।
শবনম বলেন, মনের মতো গল্প পাচ্ছি না। গল্প যে আমাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে বা আমি প্রধান চরিত্রে কাজ করব তা কিন্তু নয়। আমার কথা হলো গল্প, নির্মাণ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই মান থাকতে হবে। মানহীন কাজ করে দীর্ঘদিনের অর্জন নষ্ট করতে চাই না। স্বামী রবিন ঘোষের দেখা-শোনা করি। ওর বয়স হয়েছে। শরীরটা সবসময় ভালো থাকে না। মাঝেমধ্যে কলকাতা যাই। আত্দীয়স্বজনের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসি। একমাত্র ছেলে রনি চাকরি করছে। সব মিলিয়ে ভালো আছি। ভালো নির্মাণ ও গল্প পেলে অবশ্যই অভিনয় করব। শবনম বলেন, পাকিস্তানের ১৮০টি ছবিতে অভিনয় করেছি। নিগার, জাতীয় ও অন্যান্য পুরস্কার পেয়েছি একাধিকবার। এখনো সেখান থেকে অভিনয়ের প্রচুর প্রস্তাব আসে। এখন জন্মভূমিতেই থাকতে চাই। একটি কথা ভীষণ সত্য যে, পাকিস্তানের ছবিতে বেশি কাজ করলেও পোশাক-পরিচ্ছদ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সবসময়ই বাঙালিয়ানাকে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। মনেপ্রাণে আমি সত্যিকারের একজন বাঙালি। নিজ দেশে হাতে-গোনা কয়েকটি ছবিতে কাজ করলেও এতেই ব্যাপক দর্শক ভালোবাসা পেয়েছি। কারণ ওই যে বললাম- মানের সঙ্গে কখনো আপস করিনি।
শবনমের জন্ম পুরান ঢাকায়। প্রকৃত নাম ঝর্ণা বসাক। বাবা ননী বসাক ছিলেন খ্যাতিমান স্কাউট মাস্টার ও ফুটবল রেফারি।
১৯৫৮ সালে এহতেশাম পরিচালিত 'রাজধানীর বুকে' ছবিতে প্রথম অভিনয়। প্রায় ২০০ ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। এর মধ্যে ১৮০টি উর্দু ছবি। ১৩ বার পাকিস্তানের নিগার অ্যাওয়ার্ড ও দুবার জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৬৪ সালে বরেণ্য সুরকার ও সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
রবিন ঘোষের জন্ম ১৯৩৯ সালে বাগদাদে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঢাকায় আসেন তিনি। ১৯৫৮ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম তার 'রাজধানীর বুকে' ছবিতে রবিন ঘোষকে সংগীত পরিচালক হিসেবে ব্রেক দেন। এরপর একাধারে আশির দশক পর্যন্ত শতাধিক বাংলা ও উর্দু ছবির গানে সুর দেন ও সংগীত পরিচালনা করেন।
তার সুরে বিখ্যাত গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- 'তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে', 'আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন', 'ফুলের কানে ভ্রমর এসে চুপি চুপি বলে যায়', 'পিচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি', 'পেয়ার ভরি দো সরমিল নেয় না', 'মুঝে দিলসে না ভুলা না' প্রভৃতি। রবিন ঘোষ শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে ছয়বার নিগার পুরস্কার লাভ করেন।
এ ছাড়া অন্যান্য পুরস্কারে ভূষিত হন বহুবার। ১৯৬৪ সালে ২৪ ডিসেম্বর অভিনেত্রী শবনমকে ভালোবেসে বিয়ে করেন খ্যাতিমান সংগীত ব্যক্তিত্ব রবিন ঘোষ।