মে মাসের ৩ তারিখ ছিল পার্থ দা’র জন্মদিন। পার্থ বড়ুয়া, যাকে প্রায় সবাই পার্থ দা বলেই ডাকে। জন্মদিন শেষ হতে যখন আর কয়েক ঘণ্টা বাকি, তখনই বেজে উঠলো ফোন। অপর দিকের কণ্ঠ বহুল পরিচিত। কেন এই নিঃসঙ্গতা কিংবা বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি-গানগুলোর সুর কানে লেগে আছে। তবে আজকের আলাপ অভিনেতা পার্থ বড়ুয়ার সাথে।
এই ঈদে কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন? জানালেন, তিনি বঙ্গ-বব প্রজেক্টের দুইটি টেলিফিল্ম নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ১টি টেলিফিল্মের নাম ‘মিস্টার কে’। মাহবুব মোর্শেদের ‘নোভা স্কশিয়া’ উপন্যাস অবলম্বনে এটি নির্মিত হয়েছে। নির্মাণ করছেন ওয়াহিদ তারেক। ঈদে দেশের জনপ্রিয় ও পথিকৃৎ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘বঙ্গ’ সমকালীন সাত লেখকের সাহিত্য নিয়ে সাতটি অরিজিনাল ফিকশন রিলিজ করেছে। তারই একটি কাজ মিস্টার কে। একদিকে অতিমারি, অন্যদিকে বৈরি আবহাওয়া, তার মধ্যেও সতর্কতা অবলম্বন করে শুটিং হয়েছে।
‘তারেকের সাথে কাজ করার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের। ও খুব ভালো লেখে, আর ও কি করতে চায় সে বিষয়ে খুব ক্লিয়ার। প্রথমদিন বসেই তারেক আমাকে চরিত্রের মুডটা বুঝিয়েছে, কারণ আমি নিজে যদি চরিত্রটাকে বিশ্বাস না করি তাহলে অভিনয় করব কীভাবে?’ এমনটাই বলছিলেন পার্থ দা। তার চরিত্রের নাম প্রফেসর আনাম, পেশায় পরিসংখ্যানের শিক্ষক। গাণিতিক যুক্তির ওপর আগ্রহ এবং ঠিক এই কারণেই তাকে অপহরণ করা হয় একটি বিশেষ কাজ উদ্ধার করার জন্য। গতানুগতিক চরিত্র থেকে এটি অনেকটাই আলাদা। বৈচিত্র্যময় মনোজগৎ নিয়ে কাজ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু কাজটা করতে বেশ ভালো লাগছে পার্থ বড়ুয়ার। আর এই ভালোলাগা ছড়িয়ে গেছে দর্শকদের মাঝেও। দর্শক ‘মিস্টার কে’-কে সেরা ব্যতিক্রমী নির্মাণ বলছেন।
পেশায় সংগীতশিল্পী হলেও পার্থ বড়ুয়া নিজেকে একজন অভিনেতা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর মধ্যে আলোচিত বেশ কিছু টেলিফিকশনের পাশাপাশি বড় পর্দার কাজ আয়নাবাজি এবং হালের আলোচিত ওয়েব সিরিজ তাকদীরে হিটম্যানের চরিত্রে সমাদৃত হয়েছেন। তবে কেউ যদি ভেবে থাকেন, নিছক শখের বশে অভিনয়ে এসেছেন পার্থ বড়ুয়া, তাহলে ভুল করবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। নাট্যকলা তার পড়াশোনার অংশ ছিল এবং একই সাথে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন গ্রুপ থিয়েটারের সাথে। ‘১৯৮৬-৮৭ সালের কথা, চট্টগ্রামে থিয়েটার মুভমেন্ট খুব স্ট্রং ছিল। অরিন্দম, তীর্যক, থিয়েটার ৭৩ খুব সক্রিয় ছিল। আর আমার বাসা ছিলো চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির পাশেই,’ আড্ডার ছলে বলছিলেন কথাগুলো। সব মিলিয়ে নাটকের সাথে বেশ গভীরভাবেই সম্পর্ক তার। সোলস ব্যান্ডের সদস্যরা অরিন্দমের সাথে যুক্ত ছিলেন, যার জের ধরে পরবর্তীকালে পার্থ বড়ুয়া সোলস-এ জড়িয়ে যান। অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরিদীর মতো শক্তিশালী অভিনেতার সাথেও।
‘ঢাকায় আসার পর ফরিদী ভাইয়ের সাথে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছে, তখন আমরা সাহিত্য, নাটক নিয়ে আলোচনা করতাম। পরের দিকে ফরিদী ভাই আমাকে ক্যামেরা, লেন্স এগুলোও বুঝিয়ে দিতেন।’ হঠাৎ করেই যেন স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন পার্থ দা। ‘একেবারে উড়ে এসে জুড়ে বসিনি!’ হাসতে হাসতে বলেন তিনি। জানান, কাজ করার সময় সবসময়ই সাথে খুব ভালো সহ-অভিনেতা পেয়েছেন।
বঙ্গ-বব সিরিজেরই আরেকটি কাজে দেখা গেছে পার্থ বড়ুয়াকে। নাম ‘শহরে টুকরো রোদ’। জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের গল্প থেকে পর্দার গল্প নির্মাণ করেছেন নূর ইমরান মিঠু। আন্দালিব একজন কর্পোরেট কর্মকর্তা, যিনি হলুদ খামের চিঠি পেতে পছন্দ করেন। একদিন একটি বেনামী চিঠি পড়তে গিয়ে রোমাঞ্চকর বিষয়ের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। আন্দালিবের চরিত্রে থাকবেন পার্থ বড়ুয়া। এই টেলিফিল্মটিও পেয়েছে দর্শকপ্রিয়তা।
দুটি গল্পে একদমই দুটো ভিন্ন চরিত্রে দেখা গেছে পার্থ বড়ুয়াকে। বই থেকে পর্দার গল্পের সিরিজ সম্পর্কে বেশ উৎসাহ প্রকাশ করেন তিনি-‘এরকম গল্প বাছাই করে, তার উপর স্ক্রিপ্ট করে এবং ভালো নির্মাতা নিয়ে কাজ করার দায়িত্বটা কাউকে নিতেই হতো, বঙ্গ তা করেছে। বঙ্গর এই সাহিত্য নির্ভর কাজের চিন্তাকে আমি সম্মান জানাতে চাই, সাহিত্যের প্রেমে, সাহিত্য নিয়ে যে তারা কাজ করার জন্য এগিয়ে এসেছে এটা বিশাল ব্যাপার। টেলিভিশনে আগে বেশ ভালো কাজ হতো কিন্তু মান ধরে রাখতে পারেনি। দর্শক ভালো কাজ না হলে দেখবে কেন? পড়াশোনার আগ্রহটাও কমে গেছে। সব মিলিয়ে এই প্রজেক্টের কাজ ইন্টারেস্টিং লেগেছে বলেই কাজ করছি।’
বিডি প্রতিদিন/এমআই