ইরানে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কড়া সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।
একই সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতার সমালোচনা করেন তিনি।
এ সময় তিনি সবাইকে সতর্ক করেন এবং অবিলম্বে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানান।
বিলাওয়াল বলেন, যদি আমরা ইরানিদের জন্য কথা না বলি, তবে যখন তারা আমাদের পিছু নেবে, তখন আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।
বিলাওয়াল এমন সময় এই মন্তব্য করলেন যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর ভেসে বেড়াচ্ছে যে, ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট পাকিস্তান। তবে এ খবরের কোনও সত্যতা বা কোনও নির্ভরযোগ্যতা পাওয়া যায়নি।
এই জল্পনার মধ্যে সোমবার জাতীয় পরিষদের এক অধিবেশনে বিলাওয়াল বলেন, প্রথমে তারা (ইসরায়েল) ফিলিস্তিনিদের পিছু নিল। কিন্তু বিশ্ব নীরব থাকল। কারণ তারা ইসরায়েল। এরপর তারা লেবাননিদের পিছু নিল। কিন্তু আমরা কিছু বলিনি। কারণ আমরা লেবাননি ছিলাম না। তারপর তারা ইয়েমেনিদের পিছু নিল। কিন্তু আমরা চুপই রইলাম। কারণ আমরা ইয়েমেনি নই। এখন তারা ইরানের পিছু নিয়েছে। আমরা যদি চুপ থাকি, তবে যখন তারা আমাদের পিছু নেবে, তখন আর কেউ থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি শাসনের এই আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলের গণবিধ্বংসী যুদ্ধাবস্থা আমাদের সবাইকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পটভূমিতে বিলাওয়াল আরও বলেন, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে হামলার পর নয়াদিল্লির সীমান্ত পার হওয়া আক্রমণের জবাবে পাকিস্তান গত মাসে অপারেশন বুনিয়ান-উম-মারসুস চালায়। তাতে ভারতীয় ৬টি যুদ্ধবিমান (তিনটি রাফায়েলসহ) ও ডজনখানেক ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। ৮৭ ঘণ্টা পর এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের যুদ্ধ থামে ১০ মে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।
বিলাওয়াল বলেন, আল্লাহর রহমতে পাকিস্তান সামরিক, কূটনৈতিক ও ঘটনা বিশ্লেষণ করে বিজয় অর্জন করেছে। তিনি ভারতকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ‘সস্তা অনুকরণ’ বলে উল্লেখ করেন।
বিলাওয়াল বলেন, আমরা যুদ্ধের মাঠে, কূটনীতিতে এবং ঘটনা জানানোর ক্ষেত্রে যুদ্ধে ভারতকে হারিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা যুদ্ধ জয় করে ফেলেছি আগেই। পাকিস্তানের অবস্থান যে-‘আঞ্চলিক অস্থিরতা পাকিস্তান ও ভারতের জনগণের স্বার্থবিরোধী’- তা আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন পাচ্ছে। আমরা কাশ্মীরের বিষয়টি তুলে ধরেছি। ২০১৯ সালে ভারতের আগ্রাসনের সময় পূর্ববর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি কী করব, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করব? কিন্তু এখন ভারত ‘কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ দাবি থেকে পিছিয়ে এসেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার পক্ষে কথা বলেছেন এবং এখন আন্তর্জাতিক সহানুভূতি কাশ্মীরিদের দিকে ঝুঁকছে।
পানিসম্পদ ইস্যুতে বিলাওয়াল বলেন, সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিত করা অবৈধ। পাকিস্তানের পানির প্রবাহ থামানোর হুমকি জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারত যদি এ ধরনের হুমকি কার্যকর করে, তাহলে পাকিস্তান বাধ্য হবে আরেকটি যুদ্ধ করতে।
বিলাওয়াল বলেন, পাকিস্তানের বিমানবাহিনী অতীতেও ভারতকে পরাজিত করেছে, প্রয়োজনে আবার করবে।
বিলাওয়ালের বক্তব্য চলাকালে পার্লামেন্টে বিরোধীরা হট্টগোল শুরু করলে স্পিকার তাদের বক্তব্য রাখতে নিষেধ করেন। এ সময় বিলাওয়াল স্পিকারকে বলেন, জনাব স্পিকার, দয়া করে তাদের উপেক্ষা করুন। জনগণ তো করেই ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতের এবং পাকিস্তানের ভিতরের ‘সহযোগীদের’ সামনে দু’টি পথ- সিন্ধু পানি চুক্তিকে সম্মান জানানো অথবা পরিণতির মুখোমুখি হওয়া। সূত্র: জিও টিভি, দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল
বিডি প্রতিদিন/একেএ