নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন হলো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন (সদর-বন্দর)। শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে আসনটি। আসন্ন নির্বাচনে এখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এরই মধ্যে বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিস, এনসিপি ও স্বতন্ত্র হিসেবে আট মনোনয়নপ্রার্থী সরব হয়েছেন।
এ আসনে বিএনপি থেকে প্রার্থিতার জন্য সরব রয়েছেন চারজন। তারা হলেন মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও মাসুকুল ইসলাম রাজীব। জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে। দলের প্রার্থী হলেন মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ। আল্লামা মামুনুল হকের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হয়েছেন এবিএম সিরাজুল মামুন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আরও রয়েছেন এনসিপির আহমেদুর রহমান তনু ও স্বতন্ত্র মাকসুদ হোসেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই এ আসনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি প্রায় সমানভাবেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তবে বেশির ভাগ সময়ে এই আসনটি নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্যরা সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে এ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে ছিলেন সেলিম ওসমান। যিনি ওসমান পরিবারের সদস্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওসমান পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছেন। ফলে এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি।
এবারের নির্বাচনে এ আসনটিতে নজর পড়েছে ব্যাবসায়ী মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি মাসুদুজ্জামানের। তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে বেশ আগে থেকেই সরব রয়েছেন। সেই সঙ্গে বিএনপি দলীয় মনোনয়নের জন্য স্থানীয় বিএনপিসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছেন। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে- মাসুদুজ্জামান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকে নির্দেশনাও পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা আমার আছে, নির্বাচনে দাঁড়ানোরও ইচ্ছে আছে। আমি সবসময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছিলাম। ব্যবসায়ীরাও আমাকে চান। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও আমাকে চাচ্ছেন।
এদিকে মাসুদুজ্জামানের এ তৎপরতাকে মেনে নিতে পারছেন না মনোনয়নপ্রত্যাশী স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপির নেতারা। তারা সবাই মিলে মাসুদুজ্জামানের মনোনয়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রায় তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বলেন, নির্বাচনের জন্য আমি প্রস্তুত রয়েছি। সবার সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। আশা করছি; দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৬ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বতা করেছিলেন। তিনিও এবারের সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে মনোয়নপ্রত্যাশী। তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সবারই চাওয়া, আমি যেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করি। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
এই আসনের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ দুই আসন এলাকা থেকেই নেতা-কর্মীরা চাপ দিচ্ছে। দল আমাকে যেখানে মনোনয়ন করবে সেখানেই আমি কাজ করব। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা চাচ্ছি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক উৎসবমুখর হোক। এ জন্য বাংলাদেশে যত রাজনৈতিক দল আছে সবারই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। দল ছাড়াও যদি কোনো ব্যবসায়ী শিল্পপতি আগ্রহী হয় তাহলে তারাও অংশগ্রহণ করতে হবে।
আসনটিতে আল্লামা মামুনুল হকের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও তাদের মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি হলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডা. আল-আমিন রাকিব। তার পক্ষে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব এবিএম সিরাজুল মামুন বলেন- নারায়ণগঞ্জ হলো, ইসলামের জন্য উর্বর ভূমি। আমাদের দল খেলাফত মজলিস ইসলামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি আসনে একজন প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছে। জনগণেরও এটাই প্রত্যাশা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সমন্বয়ক আহমেদুর রহমান তনু বলেন, আমাকে নিয়ে মানুষের নিরব সমর্থন রয়েছে। আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।
এর বাইরে মাকসুদ হোসেন নামে একজন স্বতন্ত্রভাবে আলোচনায় রয়েছেন। যিনি সবশেষ উপজেলা নির্বাচনে ওসমান পরিবারের সমর্থনের বাইরে গিয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি এবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সরব রয়েছেন।