প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, নিরপেক্ষভাবে এবং পেশাদারি বজায় রেখে কাজ করবেন। আইন মেনে কাজ করবেন। নির্দেশনা আমরা দেব। কিন্তু বেআইনি কোনো নির্দেশনা আমরা দেব না। আমরা কারও পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেব না। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিইসি। সম্মেলনে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি উঠেছে। এ ছাড়া ভোটের আগেই ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এ সময় নির্বাচনে নানা চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরা হয়। সিইসি বলেন, ‘কোনো দলের পক্ষ হয়ে কেউ কাজ করবেন না। এটা আমরা প্রত্যাশা করি না এবং আপনারা আজকে ওয়াদা করলেন যে কোনো ব্যক্তির বা পক্ষের পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে আপনারা কোনো কাজ করবেন না।’ সিইসি বলেন, বাংলাদেশে কাজ করা খুবই কঠিন। যে অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশটা যাচ্ছে তাতে কাজ আদায় করে নেওয়াও কঠিন। কিছু কিছু পক্ষের লোকের জন্য খুব সুবিধা। আর বেশির ভাগের জন্য কঠিন। সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে কাজ করছি। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি।
নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সিইসি বলেন, আমরা সম্পূর্ণ আইন ও বিধি মোতাবেক সঠিক কাজটি সঠিকভাবে করার নির্দেশনা দেব। আপনারা যে কাজটি করছেন তা যে সঠিকভাবে করছেন সেটাও আমরা নিশ্চিত করব।
সিইসি বলেন, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে। কিন্তু ভোটের দায়িত্ব পালনকালে অবশ্যই নির্দলীয় হতে হবে। আপনি কোনো দল করতে পারবেন না। কিন্তু ভোটটা একজনকে দেবেন। এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, এ নির্বাচনটা একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই বিশেষভাবেই এটা মোকাবিলা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে, নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে অনেক অনাস্তা সৃষ্টি হয়েছে এবং আমাদেরও দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, এখন ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) শক্ত মেরুদণ্ড নিয়ে কাজ করছে। কমিশন কারও প্রতি অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ করেনি। করবেও না।
মালয়েশিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনেকেই বলছেন ৭০ শতাংশের মতো ভোট পড়তে পারে।
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, ‘জেন্ডারবান্ধব নির্বাচন করব। নারীদের আমরা গুরুত্ব দেব। কেননা ওই এক দিনই (ভোটের দিন) কেবল নারীরা গুরুত্ব পায়। সমান অধিকার পায়।’ গত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদাহরণ টেনে ইসি তাহমিদা আহমদ বলেন, ‘বিগত দিনে যা হয়েছে, আমরা দেখেছি, আপনারা দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। আপনাদের অবস্থা ছিল হৈমন্তী শুক্লার গানের মতো- ‘আমার করার কিছুই ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম’। কিন্তু এবার হবে উল্টো। মানে চেয়ে চেয়ে দেখার আর সময় থাকবে না।’ নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘যেসব কারণে আমরা জুলাই অভ্যুত্থান দেখেছি তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে দেশে ভালো নির্বাচন না থাকা। ফাইনালি যেসব কারণে জুলাই হয়েছে তা হলো পচা নির্বাচন বা নির্বাচনের নামে প্রহসন। আপনারা একবার চোখ বন্ধ করে চিন্তা করেন, ভালো নির্বাচন হলে কি এ ধরনের ঘটনা ঘটত কি না? এ ধরনের নির্বাচন করব না, নির্বাচনের অংশ হবো না। এই নির্বাচন কমিশন কখনোই আপনাদের পক্ষপাতিত্বমূলক, দুষ্ট কোনো নির্বাচনের নির্দেশনা দেবে না।’
আবুল ফজল আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো চাপ কোনো নির্দেশনা বা ইনিয়ে বিনিয়ে কিছু বলা হবে না। আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। স্বচ্ছ নির্বাচন হতেই হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, অতীতের যে কোনো নির্বাচনের থেকে আসন্ন নির্বাচন চ্যালেঞ্জের। আমরা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে চাই। আখতার আহমেদ বলেন, ‘ইসির চ্যালেঞ্জ দুটি। একটি হলো এআই-এর অপপ্রয়োগ, আরেকটি প্রবাসীদের ভোটাধিকার। আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করব।’
ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার করার দাবি : বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন সদস্যসচিব মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান। এ সময় ইসি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মনির হোসেন এ সময় প্রবাসে দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার কার্যক্রমে ইসি কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবি জানান।
মনির হোসেন বলেন, নিরাপদ যানবাহন (গাড়ি) ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইসির কর্মকর্তাদের পদের আপগ্রেডেশন প্রয়োজন। কেননা, একজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদ যদি অন্যান্য দপ্তরের চেয়ে পদমর্যাদায় কম হয় তাহলে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনারদের পদমর্যাদা আরও উন্নীত করা প্রয়োজন। এতে মন্ত্রী পর্যায়ের সঙ্গে ইসির যোগাযোগ সহজ হবে।
নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার পদে ইসি কর্মকর্তাদের নিয়োগ এবং আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিলে আচরণবিধি প্রতিপালন আরও সহজ হবে।’ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আশফাকুর রহমান বলেন, কমিশন যদি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ায় আমরা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাও মেরুদণ্ড সোজা হয়ে দাঁড়াব।