একজন দক্ষ অভিনেত্রী হয়ে ওঠার পেছনে স্মিতার স্ট্রাগল ছিল উল্লেখ করার মতো। ‘চক্র’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য মুম্বাইয়ের বস্তিতে গিয়ে সেখানকার জীবনযাত্রা লক্ষ করতেন স্মিতা। এ ছবির জন্য তিনি দ্বিতীয়বার জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন ১৯৮০ সালে।
বলিউড অভিনেত্রী স্মিতা পাতিল ছিলেন শ্যাম বেনেগালের আবিষ্কার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বরাবর সরব হয়েছেন নারীদের সমস্যা ও অধিকার নিয়ে। তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাব পূর্ণমাত্রায় পড়ত অভিনয়েও। তাঁর অভিনীত ছবিগুলো ছিল প্রথাগত নায়কপ্রধান ছবির বিপরীত মেরুর। মারাঠি ও হিন্দি ছবিতে নিজের সময়ে স্মিতা ছিলেন বলিষ্ঠ অভিনেত্রী। তাঁর প্রথম ছবি ‘মেরে সাথ চল’ মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। এর পরের বছর শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় ‘নিশান্ত’। এরপর ‘চরণদাস চোর’, ‘মন্থন’, ‘ভূমিকায়’ স্মিতার অভিনয় এবং শ্যাম বেনেগালের পরিচালনার সেই অধ্যায় দীর্ঘ হয় অন্যান্য যশস্বী পরিচালকের নির্দেশনায়। স্মিতার নামের পাশে একে একে যোগ হয় ‘আক্রোশ’, ‘চক্র’, ‘সদগতি’, ‘অর্থ’, ‘দেবশিশু’, ‘চিদম্বরম’, ‘গুলামি’, ‘বাজার’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘মান্ডি’, ‘অর্ধসত্য’ ‘মির্চ মশালা’র মতো মাইলফলক ছবি। সমান্তরাল ছবির পাশাপাশি বাণিজ্যিক ছবিতেও স্মিতা ছিলেন সমান সাবলীল। ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বর মাস। স্মিতার মৃত্যুর কিছুদিন আগে ঢাকার জনপ্রিয় সিনেমা পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক সিনেমা’য় বিশাল করে এই শিরোনাম দিয়ে লেখা হয়েছিল ঢাকার ছবিতে অভিনয় করবেন স্মিতা পাতিল। এটি ছিল ‘সাপ্তাহিক সিনেমা’র প্রচ্ছদ প্রতিবেদন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে ঢাকার একজন প্রযোজক তার সঙ্গে কথা বলে এসেছিলেন, সেটার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল সেই সচিত্র প্রতিবেদন। কিন্তু স্মিতার আকস্মিক মৃত্যুতে সেই উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি। ঢাকার ছবিতে আর অভিনয় করা হয়নি স্মিতা পাতিলের।
একজন দক্ষ অভিনেত্রী হয়ে ওঠার পেছনে স্মিতার স্ট্রাগল ছিল উল্লেখ করার মতো। ‘চক্র’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য মুম্বাইয়ের বস্তিতে গিয়ে সেখানকার জীবনযাত্রা লক্ষ করতেন স্মিতা। এ ছবির জন্য তিনি দ্বিতীয়বার জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন ১৯৮০ সালে। প্রথম জাতীয় পুরস্কার ১৯৭৭-এ ‘ভূমিকা’ ছবির জন্য। প্রথম জাতীয় পুরস্কারের অর্থ স্মিতা দান করেছিলেন সমাজসেবামূলক কাজে। ‘চক্র’ ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও লাভ করেন। এ ছাড়া আরও সাতবার তিনি মনোনীত হয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য। ১৯৮৫ সালে ভূষিত হন ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে। অভিনয়ের মতো ব্যক্তিজীবনেও স্মিতা ছিলেন স্পষ্টচেতা। লুকিয়ে রাখেননি বিবাহিত রাজ বব্বরের সঙ্গে সম্পর্ক। এ সম্পর্কের জন্য প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন ইন্ডাস্ট্রির মুখরোচক আলোচনা। তাঁর বোন মান্য পাতিল পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, নিজের পরিসরে স্মিতা ছিলেন নিঃসঙ্গ। রাজ বব্বরের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করতে পারেননি। আবার রাজ-নাদিরার সংসার ভাঙার জন্য অপরাধবোধ ও কষ্ট পেতেন। ঘনিষ্ঠ মহলে শোনা যায়, স্মিতা মা হতে চেয়েছিলেন তাড়াতাড়ি। রাজ-স্মিতার একমাত্র সন্তান প্রতীকের জন্ম ১৯৮৬ সালের ২৮ নভেম্বর। এরপর জটিল হয়ে ওঠে স্মিতার শারীরিক অবস্থা। আর সুস্থ হতে পারেননি। দুই সপ্তাহের সদ্যোজাত পুত্রকে রেখে চলে যান স্মিতা। ১৯৮৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর। মাত্র ৩১ বছর বয়সে স্মিতার অকালমৃত্যুর পর দুই বছর ধরে মুক্তি পেয়েছিল স্মিতা অভিনীত প্রায় এক ডজন ছবি। অভিনয়ের পাশাপাশি স্মিতার শখ ছিল ফটোগ্রাফি। ভালোবাসতেন গাড়ি চালাতে, ভলিবল খেলতে। একই সঙ্গে ছিলেন ট্র্যাডিশনাল। তাঁর অকালপ্রয়াণের ক্ষতি পূরণ করা যায়নি, নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন চলচ্চিত্র সমালোচকরা। মৃণাল সেনের কর্মশালায় অংশগ্রহণের সময় থেকেই ‘আকালের সন্ধানে’ দেখে তাঁর অভিনয়ের ভক্ত অনেকেই। সব ধরনের ছবিতেই অভিনয়ে তিনি ছিলেন অনবদ্য। স্মিতা পাতিলের জন্ম পুনেতে। সেখানে রেণুকা স্বরূপ মেমোরিয়ালে পড়াশোনা করেন তিনি। পুনেতে অবস্থিত ভারতের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। অভিনয়, স্টাইল, সামাজিক দায়বদ্ধতা স্মিতা পাতিলকে দ্রুত খ্যাতি এনে দেয়।