আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখাকে ধৈর্য বলে। যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ করা অত্যন্ত উপকারী আমল। এতে একদিকে যেমন বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলা সহজ হয়, অন্যদিকে দুনিয়া-আখিরাতে এর সুফল পাওয়া যায়। নিম্নে তেমন কিছু সুফল তুলে ধরা হলো—
আল্লাহর রহমত পাওয়া যায় : মহান আল্লাহ দুনিয়াতে তাঁর বান্দাদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ফেলে পরীক্ষা করেন, যারা সেসব পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে এবং ধৈর্য ধারণ করে, তারা আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও হেদায়েতের নিয়ামত প্রাপ্ত হয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা তাদের যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই আছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)
আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায় : ধৈর্য ধারণের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো, এতে মহান আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৬)
আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায় : আল্লাহর আসমানি সাহায্য পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো ধৈর্য। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪৬)
ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা : সব ধরনের ক্ষতি থেকে উত্তরণের অন্যতম পন্থা হলো ধৈর্য ধারণ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, নিশ্চয়ই সব মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, তবে তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।’ (সুরা আসর, আয়াত : ১-৩)
সফলতার পথ খোলে : ধৈর্য সফলতার পথ উন্মুক্ত করে দেয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা ধৈর্য ধর ও ধৈর্যে অটল থাক এবং পাহারায় নিয়োজিত থাক। আর আল্লাহকে ভয়, যাতে তোমরা সফল হও।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ২০০)
উত্তম প্রতিদান : মুমিনের হারানোর কিছুই নেই, মুমিন যখন কোনো বিপদ বা অপ্রাপ্তিতে ধৈর্য ধরে, তখন মহান আল্লাহ তার জন্য এর চেয়ে বড় প্রতিদান প্রস্তুত করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে যা আছে তা নিঃশেষ হবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে তা স্থায়ী; যারা ধৈর্য ধারণ করে আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে তারা যে উত্তম কাজ করে তা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সুরা নাহাল, আয়াত : ৯৬)
শত্রুর ষড়যন্ত্র থেকে নিরাপত্তা : শত্রুর নিরবচ্ছিন্ন ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পেরেও আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধরলে শত্রুর ষড়যন্ত্র মুমিনের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমাদের কোনো কল্যাণ স্পর্শ করে, তখন তাদের কষ্ট হয়। আর যদি তোমাদের মন্দ স্পর্শ করে, তখন তারা তাতে খুশি হয়। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনো ক্ষতি করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে, তা পরিবেষ্টনকারী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১২০)
ধৈর্য সৌভাগ্য বয়ে আনে : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অতঃপর মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত তারা, যারা ঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে, আর পরস্পরকে উপদেশ দিয়েছে দয়া-অনুগ্রহের। তারাই সৌভাগ্যবান।’ (সুরা বালাদ, আয়াত : ১৭-১৮)
মাগফিরাত পাওয়া যায় : যারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশ পালনে অবিচল ও যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করতে পারে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও মহাপুরস্কারের ঘোষণা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, তবে যারা ধৈর্যশীল ও নেক আমলকারী, তাদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। (সুরা হুদ, আয়াত : ১১)
কঠিন কিয়ামতের দিনও ধৈর্যশীলদের মহা পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি ধৈর্যশীলদের তাদের পুরস্কার অপরিমিতভাবে দিয়ে থাকি। (সুরা যুমার, আয়াত : ১০)
জান্নাত : ধৈর্যের বিনিময়ে জান্নাত পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, আর তারা যে ধৈর্য ধারণ করেছিল তার পরিণামে তিনি তাদেরকে জান্নাত ও রেশমি বস্ত্রের পুরস্কার প্রদান করবেন। (সুরা দাহর, আয়াত : ১২)
মহান আল্লাহ সবাইকে ধৈর্যশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।