নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম, আম্মা বাদ। দানশীলতা মানে হলো নিঃস্বার্থভাবে অন্যের উপকার করার জন্য কিছু দেওয়া বা সাহায্য করা। এটি মানব প্রেমের একটি মহৎ গুণ এবং সমাজের দরিদ্র অভাবীদের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এটি মহান আল্লাহ ও মানুষের ভালোবাসা অর্জনের বিশেষ মাধ্যম। দানশীল ব্যক্তিকে সবাই ভালোবাসে। সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বসবাস করে, কেউ ধনী আবার কেউ গরিব। ধনীদের উচিত গরিবদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সমাজের গরিব লোকদের প্রতি দানশীলতা ও বদান্যতা প্রকাশ করা একটি মহৎ কাজ। পবিত্র কোরআন মাজিদের সুরা বাকারার ২৫৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, হে মুমিনগণ, আমি তোমাদের যে জীবিকা দান করেছি, তা থেকে সেদিন আসার আগেই ব্যয় কর যেদিন কোনো ক্রয়বিক্রয় বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না। দান করা একটি ফজিলতপূর্ণ কাজ। দানশীল ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা অফুরন্ত নেকি প্রদান করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সুরা বাকারার ২৬১ নম্বর আয়াতে বলেন, যারা আল্লাহর পথে নিজের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্য বীজের ন্যায়। একটি শস্য বীজ থেকে উৎপন্ন হলো সাতটি শিষ। প্রত্যেকটি শিষে এক শ শস্য দানা। আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন, আরও বর্ধিত করে দেন। বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ। দানশীলতা মানুষকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী এবং জান্নাতেরও নিকটবর্তী। জাহান্নামের আগুন থেকে দূরবর্তী। মহানবী (সা.) বলেন, দানশীলতা জান্নাতের একটি বৃক্ষ। এর ডালপালা দুনিয়াতে ছড়িয়ে আছে। যে কেউ এর কোনো একটি ধারণ করবে তা তাকে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। আর কৃপণতা জাহান্নামের একটি বৃক্ষ। কেউ এর কোনো ডাল ধারণ করলে, তা তাকে জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেবে (বায়হাকি) দানশীলতা মানুষের পাপ মোচন করে দেয়। মহান আল্লাহর ক্রোধকে মিটিয়ে দেয়। দান করলে বিপদ আপদ দূর হয়, সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং পবিত্র হয়। মহান আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়া যায়, কেননা তিনি নিজেই দয়ালু ও দানশীল। তাই তো তিনি তার সুন্দর নামসমূহের মধ্যে দয়ালু ও দাতা নাম দুটি গ্রহণ করেছেন। পবিত্র কোরআন মাজিদে সুরা বাকারার ২৭৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, যারা নিজেদের ধনসম্পদ রাতে ও দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে রয়েছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। তিরমিজি শরিফের ১৯৫২ নম্বর হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন। ওপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। যারা তোমার অধীন আছে, তাদের থেকেই দান করা শুরু কর, আর উত্তম দান হচ্ছে তা, যা নিজের সম্পদ থেকে প্রদান করা হয়। বুখারি শরিফের ৩২২০ নম্বর হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস বর্ণিত যে রসুল (সা.) মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ছিলেন। রমজানে তিনি আরও বেশি দানশীল হতেন। রসুল মুক্ত বায়ুর চেয়েও বেশি কল্যাণময় দানশীল ছিলেন। মুসলিম শরিফের ১৮৪২ নম্বর হাদিসে রয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.)-এর চেয়ে বেশি দানশীল আমি আর কাউকে দেখিনি। বুখারি শরিফের ১৬৩১ নম্বর হাদিসে বর্ণিত আছে আল্লাহপাক বলেছেন, হে আদম সন্তান তুমি দান করতে থাক, আমিও তোমাকে দান করব। মুসনাদে আহমদের ১৩৫১ নম্বর হাদিসে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন সদকা মুমিনের জন্য ছায়া হিসেবে কাজ করবে। তিরমিযি শরিফের ১৬২৫ নম্বর হাদিসে রয়েছে নবীজি (সা.) বলেছেন এক টুকরো খেজুর সদকা করে হলেও তোমাদের এবং জাহান্নামের মাঝে প্রতিবন্ধকতা তৈরি কর। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সাহাবিরাও দানশীলতার সর্বোত্তম আদর্শ দেখিয়েছেন। তাই আসুন আমরা দানশীলতার এই মহৎ গুণটি অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দানশীল হওয়ার তৌফিক দান করুন।
লেখক : খতিব, দক্ষিণ পীরেরবাগ ওলী মার্কেট বাইতুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মিরপুর ঢাকা
বিডি প্রতিদিন/এমআই