দল গঠনের আগে থেকেই আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দেয় জুলাই বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দল গঠনের পর পেরিয়ে গেছে সাত মাস। দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের মাঠের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে সময় পাচ্ছে অক্টোবর আর নভেম্বর এ দুই মাস। এরই মধ্যে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গলদঘর্ম হচ্ছে দলগুলো। প্রতিটি দলই প্রতিটি আসনে কাকে রেখে কাকে মনোনয়ন দেবে তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু এনসিপিতে এখন পর্যন্ত লাগেনি নির্বাচনি হাওয়া। সাত মাসে অর্ধশতাধিক এনসিপি নেতাকে নিজ নিজ আসনে প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী এসব নেতাকে এখনো কোনো গ্রিন সিগন্যাল দেয়নি কেন্দ্র। সব মিলিয়ে এনসিপির সামনে এখন ৩০০ আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার চ্যালেঞ্জ।
দলীয় সূত্র জানায়, সংস্কারের জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান রচনার জন্য গণপরিষদ নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে লড়ছে এনসিপি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহীরা ব্যক্তি উদ্যোগে নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের পক্ষ থেকে সফট সিগন্যাল পেয়ে অর্ধশতাধিক আসনে যেসব নেতা প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন তাদের মনোনয়ন অনেকাংশেই চূড়ান্ত। কেবলমাত্র গণপরিষদ নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলেই পূর্ণোদ্যোমে ভোটের মাঠে নামবে এনসিপি। শুরু হবে বাকি আসনগুলোতে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ।
এখনো পর্যন্ত যেসব আসনে এনসিপির প্রার্থী প্রায় নিশ্চিত সেই তালিকায় আছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১১ আসনে নির্বাচনে লড়বেন। সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রার্থী হবেন রংপুর-৪ আসনে। মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) বা ঢাকার যে কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪, কিংবা বরিশাল-৪ আসন থেকে লড়বেন।
ঢাকা-১৭ (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট এলাকা) আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনীম জারা। ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর) আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুগ্ম সদস্যসচিব আকরাম হুসাইন। এর বাইরে দলটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার ঢাকা-৫ (ডেমরা) আসনে, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ঢাকা-৯ এবং সংগঠক মো. রাসেল আহমেদ ঢাকা-১ থেকে লড়তে পারেন। রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর মধ্যে যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল আমিন নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচন করবেন। যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান প্রার্থী হতে চান গাজীপুর-১ আসনে।
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নির্বাচনি প্রস্তুতি হিসেবে নরসিংদীতে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ আসনে প্রার্থী হতে চান। আরেক মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ভোলা-১ কিংবা ঢাকা-৯ এই দুই আসনের যে কোনো একটি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে। সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে। যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহির লক্ষ্মীপুর-১ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। অন্য নেতাদের মধ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ থেকে নির্বাচন করবেন। যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় সুনামগঞ্জ-২ থেকে এবং যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাশ মৌলভীবাজার থেকে নির্বাচন করবেন। যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির লড়বেন কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, লালমাই, লাঙ্গলকোট) আসনে। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ ছেড়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক হওয়া মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন প্রস্তুতি নিচ্ছেন পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে। যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান তুহিন ঝালকাঠি-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কুড়িগ্রাম-১ আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে এলাকায় সময় দিচ্ছেন যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ। টাঙ্গাইল-১ মধুপুর আসনে নির্বাচন করবেন মুখ্য সংগঠক অলিক মৃ। আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ আগে থেকেই মধুপুরে নানা কর্মসূচিতে সক্রিয়। যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু খুলনা-১ এবং নওগাঁয় কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস নির্বাচন করবেন। এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলিত সম্প্রদায়ের ভোটে তারা এগিয়ে থাকতে পারেন। যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন লড়বেন নোয়াখালী-২ অথবা ঢাকা-১২ আসন থেকে।
যুগ্ম সদস্যসচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান চুয়াডাঙ্গা-১, আবু সাঈদ সুজাউদ্দীন কক্সবাজার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার টাঙ্গাইল-৩, মেজর (অব.) আবদুল্লাহ মাহমুদ খান গাজীপুর-৩, মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিওন নীলফামারী-৩, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতু বরিশাল-৫, সংগঠক আবদুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল ভোলা-৪ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অর্পিতা শ্যামা দেব ও এহতেশাম হক সিলেটে, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর), হাসান আলী চট্টগ্রাম-১৪, নির্বাহী সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান নেত্রকোনা-২ আসনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কুমিল্লা-১০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও দলের যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণপরিষদের ঘোষণা এলে এনসিপি পুরোপুরি ভোটের মাঠে নামবে। প্রার্থী হিসেবে ব্যক্তি উদ্যোগে টুকটাক প্রচার-প্রচারণা চলছে। দলীয় ফান্ডিংয়ের অভাবে সেটা তেমন কার্যকর হচ্ছে না। দল যদি গ্রিন সিগন্যাল দেয় তবে সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করব।
দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মনোনয়ন বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। গণপরিষদের নিশ্চয়তা পেলেই ভোটের প্রস্তুতি নেব আমরা। ৩০০ আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার চ্যালেঞ্জও উতরে যাব।