জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তার বাস্তবায়ন আদেশের মধ্য দিয়েই হতে হবে। এ সংকট সমাধানের অন্য কোনো বিকল্প নেই। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অবিলম্বে এ আদেশ জারি করতে হবে।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক মনোনয়নপত্র বিক্রির রেকর্ড গড়বে এনসিপি। পুরো সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশ প্রতিদিন : জুলাই বিপ্লবীদের নিয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল এনসিপির বয়স মাত্র আট মাস। এরই মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে কঠিনতম নির্বাচন দোরগোড়ায়। নির্বাচন ঘিরে এনসিপির সম্ভাবনা, সংকটের জায়গাগুলো কী?
সামান্তা শারমিন : ৫ আগস্ট-পরবর্তী রাষ্ট্রে আমাদের সবচেয়ে বড় আকাক্সক্ষা ছিল ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিলোপ। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রণয়নে এ সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়েই আমরা তরুণরা ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক যাত্রা করেছি। ঐকমত্য কমিশনে এনসিপি সেই বন্দোবস্ত প্রণয়নে সর্বোচ্চ দৃঢ়তার স্বাক্ষর রেখেছে। আমরা ইতোমধ্যে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছি। এবারের নির্বাচনে তরুণ রাজনীতিকরা এনসিপির হয়ে দারুণ লড়াই জমিয়ে তুলবেন বলে আশা করছি। নির্বাচন নিয়ে আমাদের দলীয় কোনো সংকট নেই। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতার অভাব নিয়ে শঙ্কা বোধ করছি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে মনে করে। আপনি শঙ্কা বোধ করছেন কেন?
সামান্তা শারমিন : না, অন্তর্বর্তী সরকার একেবারেই সক্ষমতা অর্জন করেনি। সম্প্রতি আমরা দেখলাম, একটি দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর পুরো দেশে কীভাবে অনাচার তৈরি হলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা কোনোভাবেই সমাধান করতে পারল না। এ ঘটনাগুলোর ব্যাপারে আগে থেকে তথ্য থাকা, গোয়েন্দা তথ্য থাকা এ রকম কোনো কিছুই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় আমরা দেখতে পেলাম না। তাদের কার্যকর ভূমিকা দেখলাম না। সুতরাং আমার কাছে মনে হয় না যে, ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো প্রস্তুতি সরকারের আছে। বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে গ্রুপিং এবং সেখান থেকে উৎসাহ পাওয়া সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণ নাগরিক ও ভোটারদের রক্ষা করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথে অনৈক্য বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাধান কোন পথে?
সামান্তা শারমিন : সব দলকে এ ঐকমত্যে আসতে হবে যে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তার বাস্তবায়ন আদেশের মধ্য দিয়েই হতে হবে। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট থেকে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূসকে নির্বাহী ক্ষমতাবলে এ আদেশ জারি করতে হবে। সনদে কোনো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রাখা যাবে না। এ ছাড়া এ সংকট সমাধানের অন্য কোনো বিকল্প নেই। যদি এর অন্য কোনো বিকল্প থেকে থাকে সেটা শুনতে আমরা খুবই আগ্রহী। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি বিকল্প নেই। তা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমাদের জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে না চাইলে অবিলম্বে এ আদেশ জারি করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ওপেন নমিনেশন ফরম ঘোষণা করেছেন? সবশেষ পরিস্থিতি কী? কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
সামান্তা শারমিন : ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এক দিনে ৪৮ জন অনলাইন ফরম পূরণ করেছেন। অফিস থেকে সরাসরি ফরম নিয়েছেন আরও ১০ জন। সর্বোচ্চসংখ্যক মনোনয়ন আবেদন ফরম বিক্রি হবে। এনসিপি এবার সংসদে জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি পাঠাবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্বাচন অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এনসিপি প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মাঠে নামছে। দলীয় ফান্ডের বিষয়ে পরিকল্পনা রয়েছে কি?
সামান্তা শারমিন : আমরা স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ার উদাহরণ গড়তে চাই। আমাদের দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এ বিষয়গুলো ধাপে ধাপে আরও বিস্তারিতভাবে সবার সামনে তুলে ধরবে। নির্বাচনি ব্যয় সামলাতে দুইভাবে দলীয় ফান্ড জোগাড় করা হবে। প্রথমত দলের নির্বাচনি প্রচারের জন্য আমরা ক্রাউড ফান্ডিং করব। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য চাইব। দ্বিতীয়ত প্রতিটি আসনে পছন্দের প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্পেইনে সহযোগিতা করতে আগ্রহীরা ওই প্রার্থীকে খরচ দিতে পারবেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নির্বাচনি জোটের বিষয়ে এনসিপির সর্বশেষ চিন্তা ভাবনাটা যদি বলতেন।
সামান্তা শারমিন : নির্বাচনি জোটের চেয়ে আমরা এককভাবে নির্বাচন করতে বেশি আগ্রহী। এ লক্ষ্য ধরেই আমরা প্রার্থী তালিকা তৈরি করছি। যদি জোট হয়, তাহলে অবশ্যই পরিবর্তনকামী এবং সংস্কারপন্থি দলগুলোর সঙ্গে হতে পারে।