রাজধানীর মিরপুর কালশীতে প্রধান সড়কের ওপর ছোট কাঠের টেবিলে প্লাস্টিকের বোতলে অকটেন বিক্রি করছিলেন মো. রানা মিয়া। হাফ লিটার, এক লিটার, দুই লিটারের বোতলে ভরে তিনি অকটেন বিক্রি করছেন দুই মাস ধরে। টেবিলের পাশে প্লাস্টিকের কয়েকটি ক্যারেটে বোতলে বোতলে বিক্রির জন্য রাখা ছিল আরও কয়েক লিটার অকটেন। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লিটারের অকটেন বিক্রি করেন রানা। পেট্রোলপাম্পের কিছু কর্মচারী ২৫ লিটারের ড্রামে করে অকটেন এনে তাঁর কাছ বিক্রি করেন। অথচ অদূরেই পল্লবী থানা। অর্থাৎ পুলিশের নাকের ডগাতেই দিনের পর দিন এভাবে চলছে অবৈধ বিপজ্জনক দাহ্য জ্বালানি বিক্রির কার্যক্রম। ঢাকায় গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পথে ঘাটে এভাবে দেদার বিক্রি হওয়া পেট্রোল-অকটেন এসব অগ্নিনাশকতায় অপরাধীরা চাইলেই ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল সচিবালয়ে রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি কিছুদিনের জন্য বন্ধ করার কথা জানিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুনের ঘটনার কারণে তিনি এমনটি জানান।
মিরপুর ১, ৬, ১০, ১১, ১২, ভাসানটেকসহ গোটা মিরপুরের প্রধান প্রধান রাস্তার পাশে এখন মুড়িমুড়কির মতো অকটেন-পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিন ঢাকার মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ, গাবতলী এবং পাশের গাজীপুর, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জে প্রধান সড়কের ওপর মোটর পার্টসের দোকানসহ ছোটখাটো মুদি দোকানে দেদার এসব দাহ্য পদার্থ বিক্রি করতে দেখা যায়। আগে লুকিয়ে এসব জ্বালানি বিক্রি করলেও এখন কোনো রাখডাক ছাড়াই খোলা জায়গায় পেট্রোল-অকটেন বিক্রি হচ্ছে। রাস্তার ধারে ছোট ছোট দোকান, খুচরা মোটর পার্টসের দোকানে পেট্রোলপাম্পের চেয়ে প্রতি লিটারে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি মূল্যে এসব জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে। এসব অবৈধ দোকানের মালিকরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সরকারি যানবাহনের একশ্রেণির অসাধু চালক তাদের কাছে অবৈধভাবে নিয়মিত তেল সরবরাহ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রাইভেট কারের অসাধু গাড়িচালকও চুরি করে এসব দোকানে তেল বিক্রি করেন। এ ক্ষেত্রে চালকরা পেট্রোলপাম্পের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা কমে তা বিক্রি করে দেন। তালিকায় আরও আছেন বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম জাতীয় গাড়ির চালকরা। পেট্রোলপাম্প মালিকরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এখন ছোট ডিসপেনসার দিয়ে ব্যারেলের মধ্যে থেকে তেল বিক্রি হচ্ছে। এটি পুরোটাই অবৈধ কাজ। তাঁরা জেলা প্রশাসক-পুলিশকে বলে অনেকবার এ অবৈধ কাজ বন্ধের চেষ্টা করিয়েছেন কিন্তু লাভ হয়নি।
বাংলাদেশ পেট্রোলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল বলেন, ‘এ ধরনের দাহ্য পদার্থ এভাবে খোলাবাজারে বিক্রি করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। লন্ড্রির দোকান, মুদি দোকান, গ্রামগঞ্জ-হাটবাজার যেখানে খুশি সেখানে খোলা জ্বালানি বিক্রি হচ্ছে।’