নায়করাজ খ্যাতি পেয়েছিলেন রাজ্জাক। এ খ্যাতি পেতে বেশি সময় লাগেনি। কারণ কাজের প্রতি ছিল তাঁর অসীম ভালোবাসা আর অপরিসীম দক্ষতা। এভাবেই কাজপাগল শিল্পীরা একসময় হয়ে উঠতেন তারকা। বর্তমান সময়ে ‘তারকা’ শব্দটিই যেন হারিয়ে গেছে। এ নিয়ে সিনিয়র চলচ্চিত্রকার মতিন রহমানের বক্তব্য ছিল এমন- ‘এখন যারা অভিনয়ে আসছেন তাদের মধ্যে কাজ নয়, সহজেই অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার প্রবণতা বেশি। মানে পেশার প্রতি ডেডিকেশন বলতে গেলে থাকে না বলেই বর্তমানে অভিনয়ে আসা শিল্পীরা আর তারকা হয়ে উঠতে পারেন না।’ বলতে গেলে নব্বই দশক পর্যন্ত যেসব শিল্পীর চিত্রজগতে আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁদের মধ্যে প্রায় সবাই অল্প সময়ে তারকা হয়ে উঠেছিলেন। গত দুই দশকে বাংলা চলচ্চিত্র কয়েকজন মেধাবী, সুদর্শন, গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রী পেলেও তাঁরা আর লিজেন্ড হয়ে উঠতে পারেননি। সৃষ্টি করতে পারেননি স্বতন্ত্র তারকা ইমেজ, স্টাইল বা স্টারডম। ষাটের মাঝামাঝি থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত সময়কালকে বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ বলেন বোদ্ধারা। সেই সময়ে চলচ্চিত্রকে স্বমহিমায় আলোকিত করেছেন রাজ্জাক-কবরী, উজ্জল-ববিতা, শাবানা-আলমগীর, ফারুক-ববিতা, বুলবুল আহমেদ-ববিতা, সোহেল রানা-সুচরিতা, জসিম-রোজিনা, ওয়াসিম-অলিভিয়া বা অঞ্জু ঘোষ, জাফর ইকবাল-ববিতা, আজিম-সুজাতা, রহমান-শবনম, আনোয়ার হোসেন-আনোয়ারা, ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি, সালমান শাহ-শাবনূর বা মৌসুমী, নাঈম-শাবনাজ, শাকিব খান-অপু, রিয়াজ-শাবনূর, ফেরদৌস-মৌসুমীর মতো জুটি ও তারকা। কিন্তু পরবর্তীকালে অনেক শিল্পী চলচ্চিত্রে এলেও তারকা হয়ে উঠতে পারেননি কেউ-ই। মেগাস্টার-খ্যাত উজ্জল বলেন, আসলে কেউ লিজেন্ড হয়ে জন্মায় না। পর্দার ইমেজ অভিনেতাকে লিজেন্ড করে দেয়। এখন অভিনয়শিল্পী হতে গুণ লাগছে না, সময় লাগছে না। লাগছে না কোনো পরিশ্রমও। তাই যত দ্রুত উন্নতি, তত দ্রুত পতনও হচ্ছে। অন্যদিকে এর জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবও দায়ী। বাংলাদেশে এখনো একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠেনি। প্রশিক্ষণের জন্য ফিল্ম ইনস্টিটিউট কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। সিনিয়র চলচ্চিত্রকারদের কথায়-বিশ্বে বাংলাদেশের শাবানাই একমাত্র অভিনেত্রী যিনি একটি দেশের চলচ্চিত্রজগতে সর্বকালের সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা নিয়ে চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে গিনেস বুক অব রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন। শাবানার কান্নায় কাঁদেননি এমন নারী দর্শক খুঁজে পাওয়া যাবে না দেশে। কবরীর ভুবনমোহিনী হাসি মুগ্ধ করেছে সব শ্রেণির দর্শককে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতার জন্য তাঁর এক ভক্ত বুকে-পিঠে নাম লিখে ১৯৮৩ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন করেছিলেন। ববিতা ছিলেন সে সময়ের ফ্যাশন আইকন। অঞ্জু ঘোষ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল ছবি ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র নায়িকা। চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, একসময় তারকাশিল্পীর অভাব ছিল না। এফডিসি একসঙ্গে অনেক তারকার পদচারণায় মুখর থাকত। ষাট থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত ঢাকার ছবির রমরমা অবস্থা ছিল। কবরী, শাবানা, অলিভিয়া, অঞ্জু, রোজিনা, সুচরিতা- এরা আধুনিক ছিলেন তাঁদের সময়ের থেকে। দিতি ছিলেন তাঁর সময়কে অতিক্রম করা প্রতিভা। রাজ্জাক ছিলেন পাশের বাড়ির ছেলে। বুলবুল আহমেদ ‘মহানায়ক’ হয়ে যে অভিনয় ক্ষমতা দেখান সেখানে আর কাউকেই তাঁর সমতুল্য লাগে না। জসিম যেভাবে রক্তচোখে তাকাতেন, বড় হাতের মুষ্টিতে ঘুষি মারতেন- ওটা আর কাউকে মানায় না। ওয়াসিমের তারুণ্য আর কারও মতো ছিল না। ফারুক গ্রামীণ আবহে অনন্য। জাফর ইকবালের ছিল সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা স্টাইল, ফ্যাশন, ক্রেজ ও অভিনয়। সালমান শাহ একাই ১০০। অভিনয়, স্টাইল, তারকাখ্যাতি, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে অনন্তকালের একটা তৃষ্ণা তিনি। হুমায়ুন ফরীদি পর্দা আর চরিত্র শাসন করা বিরল অভিনেতা। এ টি এম শামসুজ্জামানকে চিনতে একসঙ্গে তিনটি বৈশিষ্ট্যকে মাথায় আনতে হয়। খলনায়ক, ভালো মানুষ আর কৌতুক অভিনেতা। এখন সেরকম অভিনেতা-অভিনেত্রী আর গড়ে উঠছে না। অভিনেত্রী ববিতা বলেন, লিজেন্ডারি অভিনেতা-অভিনেত্রী হতে গেলে সাধনা দরকার। নতুন যারা আসছেন তাদের মধ্যে অল্প পরিশ্রমে দ্রুত তারকা এবং অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার লোভ বেশি। মেধাহীনতায় ভুগছেন তারা। শূন্য থাকছে ফলাফল। নির্মাতারাও নতুনদের শিখিয়ে পড়িয়ে কাজ আদায় করে নিতে পারছেন না। নির্মাতারা যদি সঠিক নির্দেশনা দেন তাহলে হয়তো এ সংকট অনেকটাই লাঘব হতে পারে।
শিরোনাম
- সুপার ওভারের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারাল ভারত
- পিয়া জান্নাতুলের ক্ষোভ...
- চকবাজারে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে প্লাস্টিক ব্যবসায়ী খুন
- পিআর পদ্ধতির কথা বলে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র চলছে : গয়েশ্বর
- ফেব্রুয়ারিতে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি
- বার্সা ম্যাচের আগে চোটে ছিটকে গেলেন পিএসজি তারকা
- সায়েদাবাদে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত
- স্বৈরশাসক দেশটাকে ধ্বংস করে গেছে: তৃপ্তি
- আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্টে শুরু হলো গ্র্যান্ড সুফী নাইট
- দলমত নির্বিশেষে গণতন্ত্র ও সংস্কার এগিয়ে নেবে বাংলাদেশ : ড. ইউনূস
- জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় কূটনীতিকদের ওয়াকআউট
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৫ দাবিতে খেলাফত মজলিসের দেশব্যাপী বিক্ষোভ
- ইউরোপের তিন দেশ থেকে ফেরত পাঠানো হলো ২৯ বাংলাদেশিকে
- যারা নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত করবে, তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে : নবীউল্লাহ নবী
- ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ ঢাবির সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে : ঢাবি সাদা দল
- কুমার নদে নৌকাবাইচে মানুষের ঢল
- চাকসু নির্বাচন: রবিবারের মধ্যে সব প্যানেলই ইশতেহার প্রকাশের প্রস্তুতি
- চুয়াডাঙ্গায় দুর্গাপূজায় বিএনপির শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ
- ডাকসু ভোট : প্রশাসনের জবাবে ‘অভিযোগ এড়ানোর কৌশল’ দেখছে ছাত্রদল
- মাছ ধরতে গিয়ে জেলে নিখোঁজ
প্রকাশ:
০০:০০, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
আপডেট:
০২:৩২, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
/
শোবিজ
চলচ্চিত্রে তারকা শিল্পীর অভাব কেন?
আলাউদ্দীন মাজিদ
প্রিন্ট ভার্সন

এখন যারা অভিনয়ে আসছেন তাদের মধ্যে কাজ নয়, সহজেই অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার প্রবণতা বেশি। মানে পেশার প্রতি ডেডিকেশন বলতে গেলে থাকে না বলেই বর্তমানে অভিনয়ে আসা শিল্পীরা আর তারকা হয়ে উঠতে পারেন না...
টপিক
সর্বশেষ খবর

১২ দিনের ছুটিতে নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রাথমিক ৯ দিনের
১৯ ঘণ্টা আগে | ক্যাম্পাস

প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে টিআইবির বিবৃতি ভুল তথ্যে তৈরি : প্রেস সচিব
৯ ঘণ্টা আগে | জাতীয়