খাগড়াছড়িতে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা সহিংস সড়ক অবরোধ কর্মসূচির সময় মহাজনপাড়া এলাকায় পাহাড়ি যুবকরা হাতে ভারী অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অস্ত্র হাতে তাদের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
শহরের রাস্তায় প্রকাশ্যে এমন সশস্ত্র অবস্থার ফলে শান্তিপ্রিয় পার্বত্যবাসীর মধ্যে সংশয় ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে, শিক্ষার্থীদের ব্যানার ব্যবহার করে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উদ্দেশ্যমূলকভাবে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের উসকানি দিচ্ছে। ভিডিও দেখে অস্ত্র হাতে সহিংস আক্রমণকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে একটি মহল ধর্ষণ ইস্যুকে সামনে আনছে। তবে পূর্বে একাধিক পাহাড়ি মেয়ে পাহাড়ি যুবকদের দ্বারা ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হলেও সামাজিক বিচারের নামে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
ধর্ষণের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা, গণধর্ষণে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ধর্ষকদের ছাড় দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তখন পাহাড়ি সংগঠনগুলো নীরব ছিল এবং এমনকি সেসময়ে ব্যানার নিয়ে রাস্তায় দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, বর্তমান ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক জনকে আটক করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, আজকের সহিংস অবরোধে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের চেঙ্গী সেতু এলাকা, স্বনির্ভর এলাকা; খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের পেরাছড়া, টেকনিক্যাল স্কুল, ভাইবোনছড়া, গাছবাগান; খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল, ৯ মাইল; খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কের মহালছড়ি ২৪ মাইল, সিঙ্গিবালাসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি যুবকরা সড়কে অবস্থান নেন।
কিছু স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলা হয় এবং পেট্রোল দিয়ে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে যাত্রীবাহী বাস আটকিয়ে উল্লাস করা হয়। কোথাও আবার টায়ার জ্বালিয়ে অফিসগামী ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পোড়া টায়ার ও গাছের গুঁড়ি সরিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য সড়ক উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি অবরোধের কারণে দূরপাল্লার বাস চলাচল ও পর্যটকবাহী জিপসহ অন্যান্য যানবাহনের চলাচল বন্ধ থাকায় জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাগড়াছড়িতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানিয়েছেন, শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় ১৪৪ ধারা কার্যকর থাকবে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে প্রাইভেট পড়ার পথে খাগড়াছড়ি সদরে এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে আহত অবস্থায় একটি ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ এবং আদালত তাকে ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক