রংপুর মহানগরের চিলমন এলাকার কৃষক গৌরাঙ্গ রায়দের একসময় সারা বছরই গোলায় ধান থাকত। প্রয়োজনমতো মিল থেকে ধান ভাঙিয়ে চাল করে সংসারের প্রয়োজন মেটাতেন। এখন তিনি এবং তাঁর বাবা-কাকারা জমি থেকে ধান ওঠার পরপরই বিক্রি করে দেন। পরে প্রয়োজনমতো বাজার থেকে চাল কিনে খান। তাঁদের মতো উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ কৃষক এখন ধান বিক্রি করে চাল বাজার থেকে কিনে খাচ্ছেন। এ অবস্থায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যের ধানের গোলা। এ ছাড়া অটো রাইস মিলগুলোর দাপটে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১২ হাজার মিল চাতাল একে একে বন্ধ হয়ে গেছে। খাদ্য অধিদপ্তরের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া, উৎপাদন খরচ বেশি, লেবারসংকটসহ নানান কারণে বন্ধ হয়েছে এসব মিল চাতাল। ফলে মিল চাতালের অনেকেই ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। গ্রামগঞ্জে হাটবাজারে মিল চাতাল কমে যাওয়ায় কৃষক বাড়তি ঝামেলার ভয়ে ধান গোলায় ওঠার আগেই বিক্রি করে দিচ্ছেন।
দুই-এক জন বড় কৃষকের ঘরে সারা বছর ধান থাকলেও ছোট ও মাঝারি কৃষকের ঘরে ধান থাকে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইচ্ছেমতো চালের দাম কমবেশি করছেন অটো রাইস মিল মালিক, মজুতদার ও ব্যবসায়ীরা।
রংপুরের মাহিগঞ্জ, দিনাজপুরের পুলহাট, বগুড়া, নওগাঁ রাজশাহী থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে যেত। চাল ব্যবসা ঘিরে এসব এলাকায় গড়ে ওঠে হাজার হাজার মিল চাতাল। এক দশক আগেও শত শত মানুষের হাঁকডাকে মুখর থাকত মিল চাতাল এলাকা। এখন ধানের অভাবে মিল চাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক স্থানকে মনে হয় মৃত শহর। রংপুরের মাহিগঞ্জের বিশিষ্ট আড়তদার হাসেম আলী, ফারুক হোসেনসহ কয়েকজন কৃষক ধান বিক্রি করে চাল কিনে খাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন বাড়তি ঝামেলায় কেউ যেতে চান না। ফলে অনেকে জমিতেই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ ছাড়া অটো রাইস মিলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে উত্তরাঞ্চলের ১০-১২ হাজার মিল চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও কৃষক ইচ্ছেমতো ধান ভাঙতে পারছেন না।’