গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার গতিরোধ করেছে ইসরায়েল। ৪০টিরও বেশি নৌযানে গঠিত এই বহরে ছিলেন শতাধিক অধিকারকর্মী। তাদের আটক করার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও বিশ্বনেতারা। একই সঙ্গে ইস্তাম্বুল, এথেন্স, বুয়েনস এইরেস, রোম, বার্লিন ও মাদ্রিদের মতো বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনপন্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ হয়েছে জর্ডান ও তিউনিসিয়াতেও।
৫০০ জনের এই নৌবহরে অংশ নিয়েছিলেন অন্তত ৪৪টি দেশের প্রতিনিধি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, স্পেন, মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও কলম্বিয়া উল্লেখযোগ্য।
বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিন:
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে জানিয়েছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবাধ চলাচলের অধিকার রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইসরায়েলের এই হস্তক্ষেপ অবৈধ এবং অগ্রহণযোগ্য।
তুরস্ক:
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের ভাষায়, এটি প্রমাণ করে নেতানিয়াহু সরকারের ফ্যাসিবাদী ও সামরিকতাবাদী নীতি, যা গাজাকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
মালয়েশিয়া:
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম মালয়েশীয় নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, “ইসরায়েলকে জবাবদিহি করাতে সব বৈধ ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইসরায়েল শুধু ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারই নয়, বৈশ্বিক বিবেককেও পদদলিত করছে।”
দক্ষিণ আফ্রিকা:
প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা আটককৃতদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানান, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি নকোসি জুয়েলিভেলিলে ম্যান্ডেলাও রয়েছেন। রামাফোসা বলেন, নৌবহরে থাকা জীবনরক্ষাকারী পণ্য গাজায় পৌঁছাতে দেওয়া জরুরি।
কলম্বিয়া:
প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ঘোষণা দেন, ইসরায়েলের এ কর্মকাণ্ডের জেরে তাঁর সরকার ইসরায়েলি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করছে এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করছে। একই সঙ্গে তিনি জানান, নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইতালি:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেছেন, ইসরায়েল তাঁকে আশ্বস্ত করেছে যে নৌবহরের বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতা চালানো হবে না। ইতালীয় ইউনিয়নগুলো শুক্রবার গাজার প্রতি সংহতি জানাতে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
যুক্তরাজ্য:
লন্ডন জানিয়েছে, তারা ঘটনাটিতে “খুবই উদ্বিগ্ন” এবং এতে অংশ নেওয়া ব্রিটিশ নাগরিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, নৌবহরের ত্রাণ মানবিক সংস্থাগুলোর কাছে হস্তান্তর করা উচিত।
গ্রিস:
গ্রিস ইতালির সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
আয়ারল্যান্ড:
প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিনস বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় অপরিহার্য ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়।
পাকিস্তান:
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নৌবহরে ইসরায়েলি হামলাকে “নৃশংস আক্রমণ” আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানান এবং গাজার মানুষকে সহায়তা পৌঁছানোর ওপর জোর দেন।
বেলজিয়াম:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাকসিম প্রেভো আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার হলো বেলজীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ফ্রান্স:
ইউরোপ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে, আটক ফরাসি নাগরিকদের কনস্যুলার পরিষেবা দেওয়া এবং দ্রুত দেশে ফেরার ব্যবস্থা করার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্র:
এ সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন কংগ্রেসের ২০ জন ডেমোক্র্যাট সদস্য হোয়াইট হাউসকে নৌবহর রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ:
জাতিসংঘ এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেসকা আলবানিজ বলেছেন, “ইসরায়েল গাজার মানুষকে মৃত্যুপুরীতে ফেলে রেখেছে, আর পশ্চিমা বিশ্ব নীরব থেকে সহযোগিতা করছে।”
সোর্সঃ টি আর টি, সিজিটিএন
বিডি প্রতিদিন/আশিক