যখন কেউ কোন সাহিত্য রচনা করেন সেটা সম্পূর্ণ নিজ থেকেই করেন। যেমন: রবি ঠাকুর যখন ‘আমার সোনার বাংলা’ লিখেছেন, সেটি ছিল একটি সাহিত্য, একটি অনবদ্য সৃষ্টি। সাহিত্যের কোন গণ্ডি হয় না, সাহিত্য হয় সামষ্টিক। রবীন্দ্রনাথের লেখা বাংলাদেশ, ভারত, নেপালের জাতীয় সংগীত। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব কম চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি সে রকমই একটি অনবদ্য সৃষ্টি হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরের পদ্মা লাইফ টাওয়ারস্থ বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ আইপি টিভির কার্যালয়ে মাইক চলচ্চিত্রের শুভ মহরত অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মকবুল হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মাইক চলচ্চিত্রটি বাঙালি জাতির সম্পদে পরিণত হবে। সীমান্ত ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। চলচ্চিত্র এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যম যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে খুব সহজেই অন্য দেশের মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছে যেতে পারে। একটি দেশের মানুষের জীবনযাপন, সংস্কৃতি কেমন সিনেমার মাধ্যমে তা মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। পৃথিবীতে এ ধরনের আর কোনো মাধ্যম নেই।
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব বলেন, মাইক চলচ্চিত্রটি যে বিষয়টি নিয়ে তৈরি হচ্ছে সেটি খুবই যুগোপযোগী। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কম চলচ্চিত্র হয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচাইতে মূল্যবান। ১৯৭১ সালে চাপিয়ে দেয়া অসম পশু শক্তির বিরুদ্ধে কৃষক, শ্রমিক ছাত্ররা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছে, মা-বোনেরা সম্ভ্রম দিয়েছিল। এই অর্জন আমাদের কাছে সম্পদ।
তিনি আরও বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিলে তারা ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেনি, দেশকে ভালোবাসেনি। তারা বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও মুক্তিযুদ্ধকে সামনে নিয়ে আসতে ভয় পেয়েছিল। কারণ তাদের ভেতর বোধশক্তি ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধ্বংস করতে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি এখনো তৎপর। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এখনো একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, দেশকে অস্থিতিশীল করতে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তাদের ভালো লাগে না। আমরা যদি নতুন প্রজন্মের কাছে মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রবেশ না করাতে পারি, তাহলে তাদের মাঝে দেশপ্রেম থাকবে না। আর দেশপ্রেম না থাকলে দেশও সমৃদ্ধ হবে না।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে যারা কাজ করেন, এদেশের মানুষ তাদের সম্পর্কে অবহিত। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কঠিন সময়েও কিভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়েও তারা কাজ করেন। এমন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে, তারা সকলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেক সিনেমা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ’৭৫ পরবতী দুঃসময় নিয়ে তেমন সিনেমা হয়নি। অনেক দিন পর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও এ ধরনের সিনেমা তৈরি হচ্ছে। নির্মাতারা শুধু সিনেমাই তৈরি করছেন না। মাইকে’র মাধ্যমে বাস্তবভিত্তিক ইতিহাস তুলে ধরছেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা মহিউদ্দিন বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাঙালির আবেগের জায়গা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। এদেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ৭ মার্চের ভাষণ। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে এ চলচ্চিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। একইসঙ্গে মাইক চলচ্চিত্র মাইকের মত করে চারিদিকে ছড়িয়ে যাক, এই প্রত্যাশা করি।
মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনুভূতি আমাদের বুঝতে হবে। বঙ্গবন্ধুর অনুভূতি বলতে বুঝি বাঙালি, বাংলাদেশ আমরা বুঝি। এই অনুভূতি যদি আমরা বুঝি তাহলে সৎ, ভালো কাজের মাধ্যমে ধর্ম, গোত্র সকলের মন জয় করতে পারবো। আমরা যদি সবার মন জয় করতে পারি তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত অনেক শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন,
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিতব্য পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাইক’ এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস জানতে পারবে।
তিনি বলেন, মাইক হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্র। কাজেই আশা করছি, এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসসহ জাতির জনকের বিশ্ব কাঁপানো ভাষণ সম্পর্কে জানতে পারবে।
শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ-এর সভাপতি ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করতে হবে। তাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ আমাদের সবার। যাতে মামুনুলরা আর সামনে দাঁড়াতে না পারে। মাইক চলচ্চিত্রের ইংরেজি সাব টাইটেল থাকবে। এর মাধ্যমে বড় জনগোষ্ঠি বঙ্গবন্ধুকে জানবে, বাংলাদেশের ইতিহাস জানবে। আসুন আমরা সবাই মাইক’কে ঘরে ঘরে নিয়ে যাই। এই যাত্রায় সঙ্গী হতে পেরে আমরা সবাই নিজেকে ভগ্যবান মনে করি।
অভিনেত্রী তানভীন সুইটি বলেন, দীর্ঘ বছর দেশের প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত ছিল। জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের ও বঙ্গবন্ধুর সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। জানতে হবে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব সম্পর্কে। ‘মাইক’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম এসব সত্য ইতিহাস জানতে পারবে। মাইক চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট যখন আমার হাতে আসলো তখন ভাবলাম, ৫২, ৬৬, ৬৯ এবং ৭১’র ইতিহাসকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে এবং তা মাইক চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই অনেকটা সম্ভব হবে।
অভিনেতা আহমেদ গিয়াস বলেন, ১৯৭৫ সালে কুচক্রী মহল বঙ্গবন্ধুর নাম এই বাংলা থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু অমর হয়ে আছেন তারই হাতে গড়া এই বাংলায়। এক সময় জয় বাংলা, ৭ মার্চের ভাষণ সবই মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সম্ভব হয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর আমরা পুনরায় আবার সেই হারানো অধিকার ফিরে পাই। চলচ্চিত্রের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা স্বচ্ছ হয়ে উঠার প্রয়াসে মাইক চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মাসিক পত্রিকা অন্যদেশের সম্পাদক আল আমিন বাবু বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের নয়, তিনি গোটা পৃথিবীর। তিনি শোষিত মানুষের পক্ষে একজন সংস্কারক।
সিনেমার মূল বিষয়ে আলোকপাত করে বাবু বলেন, মাইকের প্রধান বিষয়টা হচ্ছে একটি সময়কে তুলে ধরা। যখন আমরা জয় বাংলা বলতে পারিনি, জয় বঙ্গবন্ধু বলতে পারিনি, যখন কেউ স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলতে পারিনি, শাহীনের মাইক সিনেমাটি মূলত সেই সময়টাকে তুলে ধরেছে।
উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিতব্য পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'মাইক' তরুণ লেখক, কলামিস্ট ও সংগঠক এফ এম শাহীনের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এফ এম শাহীন ও হাসান জাফরুল (বিপুল)।
এর আগে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মোট ২০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অনুদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত বছরের ১৫ জুন তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে অনুদানপ্রাপ্ত এসব চলচ্চিত্রের নাম ঘোষণা করা হয়।এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তিনটি, শিশুতোষ দুটি ও সাধারণ শাখায় ১৫টি। সেখানে শিশুতোষ ক্যাটাগরিতে এফ এম শাহীনের লেখা 'মাইক' চলচ্চিত্রটিও স্থান পায়।
মাইক সিনেমার প্রযোজক ও পরিচালক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, অভিনেতা নাদের চৌধুরী, বিবার্তা২৪ ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসিসহ 'মাইক' চলচ্চিত্রের কলাকুশলী বৃন্দ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা জার্নালের প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং কর্মকর্তা গুলশাহানা ঊর্মি, গৌরব ৭১’এর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুপম, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাঁধন প্রমুখ।