২৬ মে, ২০১৬ ১২:১৬

তসলিমার চোখে জিয়া ও সাবেরার আত্মহত্যা

অনলাইন ডেস্ক

তসলিমার চোখে জিয়া ও সাবেরার আত্মহত্যা

বামে বাংলাদেশি মডেল সাবেরা হোসাইন, মাঝে তসলিমা নাসরিন ও ডানে ভারতীয় নায়িকা জিয়া খান

সম্প্রতি প্রেমিকের পরিবারের কাছ থেকে অপমানিত হয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বাংলাদেশি মডেল সাবেরা হোসাইন। আত্মহত্যার কারণ তিনি মৃত্যুর আগে ফেসবুকে লিখে গেছেন। ২০১৩ সালের ৩ জুন রাতে মুম্বাইয়ের জুহু বিচ সংলগ্ন এলাকার বাসায় একই কায়দায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ভারতীয় নায়িকা জিয়া খান। লিখে যান তিন পৃষ্ঠার চিঠি। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগপত্রে জানা যায়, প্রেমিক সুরোজ পাঞ্চলির কারণেই আত্মহত্যাকে শেষ পথ হিসেবে বেঁছে নেন জিয়া। কারণ সে জিয়াকে জোরপূর্বক গর্ভপাতে বাধ্য করেছিলেন। মারধরও করেন। এসব আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে সরব হয়েছেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ মে) তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তসলিমার সেই বক্তব্যটি বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

''বলিউডের নায়িকা জিয়া খান আত্মহত্যা করেছিল যে কারণে, সে কারণে বাংলাদেশের মডেল সাবেরা হোসাইনও আত্মহত্যা করেছে। একই কারণে অনেক মেয়েই আত্মহত্যা করে। প্রেমিক অপমান করেছে, বা প্রতারণা করেছে, সুতরাং বেঁচে থাকার, তারা মনে করে না, কোনও প্রয়োজন আছে। সমস্যার সমাধান সাধারণত তারা এভাবেই করে। এমনই তুচ্ছ, তারা বিশ্বাস করে, তাদের নিজের জীবন।

চলচ্চিত্রে অভিনয় করলে, বা নাটক থিয়েটার করলে, বা মডেলিং করলেই মন-মানসিকতা আধুনিক হয় না। সুচিত্রা, শাবানা, ববিতা, রাজ্জাক, অমিতাভ এবং আরও অনেক তারকাই ধর্মান্ধতা, পুরুষতান্ত্রিকতা, আর কুসংস্কারে ডুবে ছিলেন এবং আছেন। পুরুষের সঙ্গে সংসার না করলে জীবন অর্থহীন হয়ে যায়, বা সন্তান জন্ম না দিলে নারীর জীবনের কোনও মূল্যই থাকে না—এগুলোকে বিশ্বাস করে শিক্ষিত নয়, অশিক্ষিত মানুষ। শোবিজে অশিক্ষিতর সংখ্যা নেহাত কম নয়।

প্রেমিকের প্রতারণার সবচেয়ে বড় শিকার তারা, যারা পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রেমিকপুরুষগুলো তাদের ছলে বলে কৌশলে বিক্রি করে দিয়েছে পতিতালয়ে। চরম দুঃসহবাসেও তারা আত্মহত্যা করে না। বরং যুদ্ধ করে নিজেকে নয়তো নিজের সন্তানকে নরক থেকে বাঁচাবার জন্য। আমি বলতে চাইছি না আত্মহত্যার অধিকার মানুষের নেই। জন্মের পর বেঁচে থাকার যেমন অধিকার আছে, মরে যাওয়ারও অধিকার আছে। তবে অকারণে মরে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। যত যাই ঘটুক জীবনে, জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই।

আমি এমন দেখেছি অনেক, প্রেমে পড়লেই মেয়েরা বড় দুর্বল, বড় ক্ষুদ্র, বড় মূল্যহীন, বড় অকিঞ্চিৎকর, বড় অপ্রতিভ, বড় অবলা, বড় অসহায় হয়ে ওঠে। আত্মসম্মানবোধ লোপ পায়। হয় প্রেমের সংজ্ঞা পাল্টাক, নয়তো মেয়েরা পাল্টাক। ক'দিন পর পরই মেয়েদের আত্মহত্যার খবর শুনতে আর ভাল্লাগছে না।''

বিডি-প্রতিদিন/ এস আহমেদ

সর্বশেষ খবর