আশির দশক থেকে শুরু করে ২০০৫ পর্যন্ত একটা গোটা গার্মেন্টস শিল্প সরকারকে কোনো ট্যাক্স দেয়নি। মালিকেরা মুনাফা করেছে, প্রাডো কিনেছে, হলিডে করতে ইউরোপ গেছে। কিন্তু সরকারকে ট্যাক্স দেয়নি।
২০০৫ সালের পর প্রথম বসানো হলো কর্পোরেট ট্যাক্স। ১০ পার্সেন্ট। উৎস কর ০.২৫ পার্সেন্ট। ২০১৪ পর্যন্ত কয়েক দফায় উৎস কর বেড়ে হলো ০.৮ পার্সেন্ট। বাপরে  .... কত ট্যাক্সরে। মালিকেরা মানবে না। তারা হুমকি ধামকি দিলো। সরকার সুরসুর করে উৎস কর কমিয়ে আনলো ০.৩ পার্সেন্টে। এনবিআর একটা স্টাডিতে দেখিয়েছিলো, উৎস কর কমিয়ে আনায় সরকারের বাৎসরিক ক্ষতি হচ্ছে ২০০০ কোটি টাকা।
২০১৫- তে কর্পোরেট ট্যাক্স বাড়িয়ে করা হলো ৩৫ পার্সেন্ট (ভারত-পাকিস্তানে গার্মেন্টস শিল্পে কর্পোরেট ট্যাক্স ৩০-৩৫ পার্সেন্ট)। ওরে আল্লাহ, বিজিএমইএ'র হাউকাউ দেখে কে! ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়ে যাবে। মালিকেরা পথে বসবে। শিল্প মন্ত্রী মালিকদের চোখের পানিতে ইমোশনাল হয়ে গেলেন। বললেন, রানা প্লাজার পরে একোর্ড এলায়েন্সের চাপে বেচারা মালিকদের এমনিতেই খুব কষ্ট। আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। ৩৫% থেকে ২০% হলো কর্পোরেট ট্যাক্স। কিন্তু মালিকরা কি আর শোনে? তারা ১০ পার্সেন্টের বেশি ট্যাক্স দেবে না। এ বছর কমার্স মিনিস্টার ঘোষণা দিয়েছে গার্মেন্টস শিল্পে কর্পোরেট ট্যাক্স আবার ১০ পার্সেন্ট করা হবে।
এখন বলতে পারেন, এতো হাই প্রোফাইল একটা ইন্ডাস্ট্রি চালায় তারা। ৪০ লাখ ফকিন্নিরে চাকরি দিলো, এতো টাকা বিনিয়োগ করলো, কত রিস্ক নিয়ে ব্যবসা করে। আহারে মায়া লাগে...
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিনিয়োগটা করলো কে? মালিক? না বিজিএমইএ?
না।
সত্য কথাটা হচ্ছে, এই ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলেছে রাষ্ট্র। এভরি ব্লাডি পেনি ইনভেস্ট করেছে রাষ্ট্র। এবং সেটা করেছে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়।
এদেশের আরএমজি ব্যবসায়ীরা শুরু করে জিরো ক্যাপিটাল দিয়ে। স্টেট ব্যাংক থেকে ঋণ পায়, ব্যাক টু ব্যাক এলসি পায়, বন্ড সুবিধা পায়, এক্সপোর্ট ক্রেডিট পায়, এবং ইউরোপ আমেরিকায় একটু আধটু ঝড় বৃষ্টি হলে এখানে বসে হাউকাউ করে নগদ ক্যাশ পায়। ২০১৫ সালের প্রথম আলোর একটা রিপোর্ট বলছে, গত পাঁচ বছরে আরএমজি মালিকেরা সরকার থেকে নগদ সাহায্য পেয়েছে প্রায় চার হাজার ২১৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, ২০১৩ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো সবমিলিয়ে মোট ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে গার্মেন্টস শিল্পকে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক একাই ঋণ দিয়েছে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রিপোর্ট বলছে, ২০০৮ এর পরে ২৭০টা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ঋণ মওকুফ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর রাষ্ট্রীয় ৮ ব্যাংকের মোট ডিফল্ট ঋণের ১৬.৭০ শতাংশ আটকে আছে গার্মেন্টস মালিকদের পকেটে।
এই যে বিপুল পরিমান রাষ্ট্রের টাকা, জনগণের টাকা, শ্রমিকের ভাগ্য উন্নয়নে কাজে লাগলে অন্য কথা ছিল। কিন্তু গত বিশ বছরে মালিকদের এক্সপোনেনসিয়ালি বড়লোক হওয়া আর শ্রমিকের কোনমতে বেঁচে থাকার রেকর্ড দেখেন।
এদেশের শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ৫ হাজার টাকা। এটা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের হিসাবে অলমোস্ট পোভার্টি লাইন। ১০ বছর আগে মেয়েরা ২ মাইল হেঁটে কাজে যেত, তারা এখনো হাঁটে। ১০ বছর আগে মেয়েরা ধার দেনা করে চলতো, এখনো তাই চলে। ১০ বছর আগে মেয়েরা ৪০ জন মিলে একটা টয়লেট শেয়ার করতো, এখন করে ১০০ জন মিলে। অথচ গার্মেন্টস মালিকদের গত ১০ বছরের ওয়েলথ কার্ভ দেখেন। তাদের গাড়ির মডেল, তাদের হলিডে বুকিং, তাদের বাথরুমের টাইলস, তাদের শপিং ডেস্টিনেশন...
উনসত্তরে এগারো দফার ৭ নম্বর পয়েন্টটা ছিল- "শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা এবং শ্রমিক আন্দোলনে অধিকার দান"।
পাকিস্তান আমলে শ্রমিকেরা যে দাবিতে রাস্তায় ছিল, ৪৭ বছর পর ডিসেম্বর মাসে আশুলিয়ার শ্রমিকেরা সেই দাবিতেই রাস্তায় নেমেছে। শেইম অন আস। (লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
লেখক: গবেষক, অ্যাক্টিভিস্ট ও সংস্কৃতিকর্মী
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ
 
                         
                                     
                                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        