এই শহরে আজ তীব্র শীত। থেমে থেমে বরফ শীতল বাতাস বইছে। গিয়েছিলাম বাড়ির পাশের সুপারমার্কেটে। ক্যাশ রেজিস্টারের পাশে হরেক রকম চকলেটের প্যাকেটে সাজানো। একটি প্যাকেটে চোখ স্থির হয়ে থাকে। লেখা, কোকোনাট ক্যান্ডি।
দেখতে অবিকল আমাদের দেশের বাতাসার মতো! দেশে বাবার বাসার পাশেই মসজিদ ছিল। যখন সেখান থেকে সমবেত স্বরে ভেসে আসতো, ইয়া নবী সালাম আলাইকা, ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা, ইয়াআআ হাবিব সালাম আলাইকা... তখন দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতাম। রেলিং ধরে দাঁড়িয়েই থাকতাম। অপেক্ষা, কখন আব্বা আসবেন। আমার ছোট্ট হাতের মুঠো ভরে কিছু দিয়ে বলবেন, 'বুড়ি, বাতাসা খাবি?'
আজ আমি টিপটিপ বৃষ্টির মাঝে বাতাসা নিয়ে বাড়ি ফিরছি। জানি ছেলে দুইটা ছুটে আসবে। অন্যসব জিনিসের ভিড়ে ব্যাগে তাদের জন্যে কি এনেছি খুঁজবে। খুঁজে পেলো কোকোনাট ক্যান্ডি। বললাম, এটা বাতাসা। ওরা খুশি। খেতে খেতে উপরে চলে গেলো।
সোফায় গা এলিয়ে বসেছি সবে, টেবিলের উপর রাখা শুকনো নারকেল দিয়ে তৈরি ফুলদানীর দিকে চোখ পড়ে। দেয়ালে নারকেলের শক্ত খোলসের তৈরি একতারা। ঘর সাজানোর এই জিনিসগুলো বিদেশের বাড়িতে ক্যামন যেন এক দেশীয় আবহ তৈরি করে রাখে। দেশ থেকে কিনে এনেছিলাম।
দাম যদিও খুব বেশি নয়, তবুও সেসময় আব্বা দেখেই চোখ গোলাকৃতি করে এক পৃথিবী বিস্ময় নিয়ে বলেছিলেন, 'এইটা কি করলি! নাইরকেল কিংবা ডাব হইলেও একটা কথা ছিল। পানিটা খাইতে পারতি, শাঁসটা খাইতে পারতি। এত্তো দাম দিয়া নাইরকেলের বাক্লা (খোসা) কিইন্না নিয়া আসলি!'
আশেপাশের কেউ কেউ আব্বার এমন কথা শুনে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়েছিলেন। আর আমি একখণ্ড আবেগ হয়ে চেয়েছিলাম আমার সহজ সরল বাপজানের মুখের দিকে। কেউ তো আর জানে না এই সহজ সরল মানুষটি আমার জীবনে কী!
বাবা-মা কেউই আজ আর বেঁচে নেই। তবুও রোজকার জীবনে কতো ভাবে ঘুরে ফিরে আসেন তাঁরা!
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/২৩ জানুয়ারি, ২০১৮/ফারজানা