ওদের নাম নাইবা বলি; কতজনই এরকম চোখের সামনে এসে যায়! আমরা কজনারই বা খোঁজ রাখি। ওদেরকে আমরা পথশিশু বলেই ডাকি। কারো বাবা, মা থাকে, কারো থাকেই না! ওই পথ ধরেই বিশেষ কাজে যাওয়া হঠাৎ চোখ পড়লো ফুটপাতের এক কোনায়, যেখানে দুটি শিশু পরম তৃপ্তিতে ফুচকা খাচ্ছে! প্লেটে ফুচকা ছিল ০৪ টি; একবার মেয়েটি একটা খাচ্ছে এবং তারপরই ছেলেটি খাচ্ছে। অবাক বিস্ময়ে শুনছি ছেলে শিশুটি মেয়েটাকে বলছে " তুই আগে নে তারপর আমি নিমু"। প্লেট থেকে ফুচকা শেষ করার পর বাকী রয়ে গেল ফুচকার টক, সেটাও তারা সমানভাগে ভাগ করে নিলো। আহা! এই বোধটুকু যদি আমাদের মাঝেও থাকতো!
ওদের খাওয়া শেষ। মনে হলো একটু কাছে যাই। কাছে যেতেই বললাম " ফুচকা খেতে ভাল লাগে"? প্রত্যুত্তরে দুজনেই জোরে বলে উঠলো "অনেক ভাল লাগে"! ফুচকার প্রতি এত মুগ্ধতা বহুদিন দেখিনি। দুজনের জন্য দুই প্লেট ফুচকা নিতেই মেয়েটা ফিক করে হেসে উঠলো! এবারও ছেলেটা প্লেট হাতে নিয়ে মেয়েটাকে দিল আগে এবং তারপর নিজে নিল। সমতা বই পুস্তকে নয় সেটির বাস্তবেও দেখা মেলে এই আমাদের আশেপাশেই! ছোট এই বাচ্চার কাছ থেকে খুব বড় একটা শিক্ষা পেলাম।
এই আমরাই বলি সমাজের অনগ্রসর অংশকে মূল স্রোতে আনতে হবে আবার ঠিক তখনি আমাদের কেউ কেউ আবার বলেন " তাঁরা না সমতা চায় তাহলে বাসে ট্রেনে ঝুলে ঝুলে যাবেনা কেন, এত সিটে বসতে চায় কেন? হুম তারা ঝুলে ঝুলেই যান। সমতা, স্বাধীনতা নিয়ে অনেক ব্যাপক আলোচনার সুযোগ রয়েছে যদিওবা তবু একটা বিষয় মাথায় রাখলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যায় আর তা হলো " আপনি, আমি যিনিই মূল স্রোতে আছি তিনিই একটু সংবেদনশীল হয়ে এগিয়ে যান প্লিজ; অনেক কিছুই অনেক সহজ করে দেবে এই একটুকু সংবেদনশীলতা!
ঠিক এক প্লেট ফুচকার মত ভালবাসা ও সংবেদনশীলতা ছড়িয়ে, ছিটিয়ে যাক সর্বত্র....
লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)।
(লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)
বিডিপ্রতিদিন/ ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান