দেশ থেকে আমার এক অতিথি এলো। তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলাম ক'দিন। খুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম নিজের পুত্র-কন্যাদের জন্যে কেনাকাটার সময়টাতে ঘুরে ঘুরে খুব যত্নে কস্মেটিকস কিনলেন গৃহের কাজে সহায়তাকারী মেয়েটির জন্যেও। সাথে ড্রাইভারের জন্যে পারফিউম আর দারোয়ানের জন্যে ঘড়ি। পেটেভাতের জীবন যাঁদের, তাঁরা হয়তো এই বিলাসী জিনিসগুলো মাস শেষে পাওয়া মাইনে দিয়ে কোনদিনও কিনার কথা ভাবে না।
কিন্তু আমার ভাবতে বেশ ভাল লাগছিলো যে, সারাদিনের কর্মক্লান্তি শেষে নির্জন দুপুরে বাড়ির সবাই যখন আয়েশী ঘুমে, তখন ছোট্ট কাজের মেয়েটি তাঁর পোঁটলা খুলে বসবে। কস্মেটিকসগুলো নেড়েচেড়ে দেখবে। কোণাভাঙ্গা আয়নায় নিজেকে দেখবে, সাজবে। ড্রাইভার পারফিউমের বোতলে রোজ নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নেবে। শেষ হয়ে যাবে সেই শংকায় ব্যবহার করবে না। দারোয়ান কারনে অকারণে দিনভর হাতের ঘড়ির দিকে তাকাবে। নিজেকে সিনেমার হিরোর মতো মনে হতেই মুগ্ধতায় ভেসে যাবে।
এইসব ভাবতে ভাবতে আমি মূলত আমার সেই অতিথির প্রতি শ্রদ্ধায় নত হয়েছিলাম।
আমার এখনো মনে পড়ে, আমাদের বিদেশ ফেরত মামা বিদেশী সাবান এবং মেকআপ বক্স দিয়েছিলেন। আমরা সেইসব কোনদিনই ব্যবহার করিনি। সাজিয়ে রেখেছিলাম শোকেসে। মাঝে মাঝে শোকেস পরিস্কার করার নামে গভীর মুগ্ধতায় সাবানের ঘ্রাণ নিতাম। মেকআপ বক্স খুলে দেখতাম। ধুলো মুছে খুব যত্নে আবারও সাজিয়ে রাখতাম।
আমরা কতো অল্পতেই না খুশি হতাম !
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/৪ মার্চ, ২০১৮/ফারজানা