আমাকে এক মিডিয়া গুরু আজ বললেন, কলকাতায় লোকে ফেসবুক ব্যবহার করে বেশি, টুইট করে কম। পশ্চিমবঙ্গে ফেসবুক down market নয়। ফেসবুকে তাবড় তাবড় সেলিব্রিটি কলকাতায় আছে। তাহলে? ভদ্রলোক বললেন, আসল কারণ social psychology-কী সেটা?
তিনি বললেন, বাঙালি অনেক বেশি কথা বলে তো তাই ফেসবুক। এখানে লিমিট লেস কথা। টুইট এ আগের চেয়ে সংখ্যা বেড়েছে বটে কিন্তু সীমাহীন নয়। এখনো word limit আছে।
আমি নিজেও বেশি কথা বলি সেই ছোটবেলা থেকে। কলেজ থেকে বাড়ি ফিরলেই বাবা বলতো, এসে গেছে বখতিয়ার খিলজী। বোন নাম দিয়েছিল, শ্রী বক্তা। বাড়ি ফিরে আমার বীর গাঁথা শোনাতাম। আজ কটা বাঘ মারলাম। কটা হাতি শিকার করলাম।
রবীন্দ্রনাথ বাবু তাই আমাদের একাধারে রোমান্টিক এবং বক্তা বানিয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন, শেষের কবিতার অমিত রায়-কথার কথকতায় পয়লা নম্বর অমিতব্যয়ী। (সূত্র-ভুল না হলে কবি রবীন্দ্রনাথ গ্রন্থ) তা আজ আমরা বাঙালি কম বেশি সকলেই অমিত রায়।
রবীন্দ্রনাথ কোনো গান বা গল্প লিখলে সেটা নিয়ে উপস্থিত পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করতে ভালোবাসতেন। নিজেই একবার বলেছিলেন, এত আলোচনা করি কেন জানো? খাওয়ার পর হাঁটলে যেমন খাওয়ার হজম হয়। কথা বললেও তাই। ভাবনা হজম হয়।
তবে কথা বলা আর না বলার একটা ভারসাম্য এবং সমন্বয় দরকার। মাত্রাতিরিক্ত কথা পাগলও বলে। যারা খুব অন্তর্মুখী হন বা স্কিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত-তাদের বহির্মন আর অন্তরমন মানে অবচেতন বা নির্জ্ঞান মনের ভারসাম্য থাকে না। সচেতন মনটাকে তারা লুকিয়ে রাখেন। যেমন মণিহারা গল্পের সেই নায়িকা-নামটা মনে পড়ছে না। আবার যারা বাজে বক বক করে তাদের সচেতন আর অবচেতন মনের মধ্যে ভারসাম্যের অভাব।
তবে কথা বলা মানে তো প্রকাশ। হার্বার্ট রিড এর কথা-আর্ট ইস এক্সপ্রেশন। সাঁত্রে বললেন আরও এক ধাপ এগিয়ে-the becoming is truth। কি আশ্চর্য, রবীন্দ্রনাথ বললেন, হয়ে ওঠাই সত্য।
অতএব এতদিন ফেসবুক থেকে দূরে থেকেছি-এখন করোনা অবসরে আবার এসেছি ফিরে-ফেসবুক জিন্দাবাদ!!
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, ভারত।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন