শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

চাকরি করব না চাকরি দেব, এই চিন্তা থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

চাকরি করব না চাকরি দেব, এই চিন্তা থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অহেতুক চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজকে তাদের মেধা ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, চাকরি না করে চাকরি দেব বা দিতে পারব, সেই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সেই চিন্তাটা মাথায় থাকতে হবে এবং আত্মবিশ্বাস থাকতে  হবে। সেটা থাকলে বাংলাদেশে আর কেউ বেকার থাকবে না।

গতকাল তেজগাঁওর কার্যালয়ে (পিএমও) জাতীয় যুব পুরস্কার-২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি অনুষ্ঠানে ২২ জন আত্মকর্মী এবং পাঁচ যুব সংগঠনের মাঝে এই পদক প্রদান করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে প্রদান করা এ পুরস্কারে এ পর্যন্ত ৪৪৫ জন আত্মকর্মী সম্মানিত হয়েছেন। খবর বাসস। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণদের মাঝে যে সুপ্ত শক্তি রয়েছে-একটা কিছু তৈরি করার, তার চিন্তা এবং মননকে বিকশিত করার, সেই কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। নিজে কাজ করবে এবং আরও দশজনকে কাজের সুযোগ করে দেবে। তিনি বলেন, আমাদের একটা লক্ষ্য হচ্ছে, এই মুজিববর্ষকে ঘিরে বাংলাদেশে আর কেউ যেন বেকার না থাকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মানসিকতাটা বদলাতে হবে। কারণ, আমাদের দেশের মানুষের মাথার মধ্যে ওই একটা জিনিস ঢুকে আছে, চাকরি ছাড়া যেন আর কিছুই করা যায় না। অথচ ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে মাসে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়।’

‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রয়োজনে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে একেকজন স্বাবলম্বী হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে কাজ করে এখন ঘরে বসেই মানুষ অনেক টাকা রোজগার করতে পারছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবসমাজ খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চাসহ সর্বক্ষেত্রেই যেন পারদর্শী হয়ে ওঠে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং নিচ্ছি। যুবকদের প্রশিক্ষণে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই প্রশিক্ষণটা একেবারে স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করতে চাই। সে লক্ষ্যে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই যে কোনো একটা বিষয়ে হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া শুরু হবে। সরকারপ্রধান বলেন, যুবকদের প্রশিক্ষণ কেবল যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকেই নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকেও এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তাঁর সরকার ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি চালু করেছে, সারা দেশে ২ হাজার ৮০০ ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে, সারা দেশের সব ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করছে। এর সবই যুবকদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে। আর এ কারণেই বেসরকারি খাতকেও উন্মুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এ পর্যন্ত আমরা ২ কোটি যুবসমাজের চাকরি এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’

‘স্টার্টআপ’ প্রোগ্রামের (কাজটি শুরু করার জন্য) জন্য সরকার ১০০ কোটি টাকা ‘থোক বরাদ্দ’ দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উদ্যোক্তা হবে তারাই এখান থেকে ঋণ পাবে। কাজ করতে পারবে এবং শুরু করলেই কিন্তু ব্যাপকভাবে কাজ করা যায়।’ তিনি বলেন, তাঁর সরকার সারা দেশে যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে, সেখানে যেমন খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা হবে তেমনি উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের সুবিধাও রাখা হবে। যেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. আখতার হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন। যুব ও ক্রীড়া অধিদফতরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান কবির মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আত্মকর্মী হিসেবে দেশে প্রথম স্থান অধিকারকারী ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান এবং দেশের সেরা যুব সংগঠক (মহিলা) হিসেবে পুরস্কার লাভকারী পারভীন আক্তার নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আতিক যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে হাঁস-মুরগি এবং গবাদিপশু প্রতিপালনের প্রশিক্ষণ এবং স্বল্পমূল্যে ঋণ নিয়ে এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে তুলেছেন। যার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মূলধনের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং বার্ষিক আয় এক কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

সর্বশেষ খবর