রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

জাফরুল্লাহর বক্তব্য ঠেকালেন ছাত্রদল নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ঠেকালেন ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে শিক্ষাবিষয়ক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে কথা বলার একপর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এক নেতা তার বক্তব্যের মাঝখানে প্রতিবাদ করে কথা বলতে শুরু করেন এবং সংগঠনের অন্য নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভাস্থল থেকে চলে যান। জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ’-এর উদ্যোগে ‘শিক্ষায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যেও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এদেশে অনেকে, যেমন এখানে আমাদের সেলিম ভূঁইয়া (শিক্ষক নেতা) বলেছেন, এ জায়গায় বিএনপি এলে বোধহয় সব সমস্যার সমাধান হবে? হবে না। কারণ বিএনপির তো আসারই ইচ্ছা নেই। বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে হবে- এ জাতীয় একটা ইচ্ছা থাকতে হবে ও আগ্রহ থাকতে হবে। আজকে বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে আল্লাহর ওহি দিয়ে। সেই ওহি লন্ডন থেকে ভেসে আসে। এ গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে হলে সবাইকে একত্রিত হতে হবে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হতে হবে বিএনপির ঘরে, নিজের ঘরে।

এ সময়ে দর্শক সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ওমর ফারুক কাউসার প্রতিবাদ জানিয়ে, সালাম দিয়ে বলেন, ‘স্যার আপনি বিএনপির কে? আপনি সবসময় বিএনপিকে নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা বলেন।’ জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমি বিএনপির কিছু না। ওই যে গণতন্ত্রে আমার কথা বলার অধিকার আছে। আমার কথাটা শুনে তারপর কথা বলেন। আপনাদের ভালোর জন্য বলছি। আপনাদের ভালোই বোঝেন না আপনারা। এ পর্যায়ে কাউসার আবার বলেন, ‘না, আমরা আমাদের ভালো অবশ্যই বুঝি। আপনি উল্টা বোঝেন। আপনি আমাদের নেতাকে নিয়ে কথা বলবেন না, কখনই বলবেন না। আপনি সব সময় আমাদের নেতা নিয়ে কথা বলেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কোনো কথা বলেন না।’ এরপর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা হল ত্যাগ করেন।

গোলটেবিল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও মোশাররফ আহমেদ ঠাকুরের সঞ্চালনায় সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সেনাবাহিনীর সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামসহ পেশাজীবী নেতারা বক্তব্য দেন।

এ সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, বিএনপি চলছে আল্লাহর ওহি দিয়ে। আর সে ওহি ভেসে আসে লন্ডন থেকে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর তোপের মুখে পড়েন ডা. জাফরুল্লাহ। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডা. জাফরুল্লাহ তারেক রহমানের প্রতি ইংগিত করে কথা বলার একপর্যায়ে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়। ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক কাউসারের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ হয়।

শিক্ষা খাতের বরাদ্দ শুভঙ্করের ফাঁকি : প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে দেওয়া শিক্ষা খাতের বরাদ্দকে শুভঙ্করের ফাঁকি বলে উল্লেখ করেছেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আনম এহছানুল হক মিলন। তিনি বলেন, শিক্ষাবিদদের প্রত্যাশা ছিল এ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া হবে। কিন্তু গতানুগতিকভাবে এ বছরও শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১১.৯২ শতাংশ। জাতীয় আয়ের (জিডিপি) হিসাবে ২.০৮ শতাংশ অর্থাৎ বড় বাজেটে সীমিত বরাদ্দ। যদিও আমরা বরাবরই শুনে থাকি শিক্ষা খাতে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ  দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মানব সক্ষমতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এবারও শিক্ষা খাতে বাজেটের বয়ান বেশি দেখানোর জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলিয়ে ৯৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বাজেটের ১৫.৭ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মূলত এককভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ মোট জাতীয় বাজেটের ১১.৯২ শতাংশ। অথচ বলা হচ্ছে- চলতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ শিক্ষা খাতে। বাজেটে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যয়ের কিছু অংশও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত। অপরদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সফঙ্গ জুড়ে দেওয়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যয় ৯৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৫.৭ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। একেই বলা হয় শুফঙ্করের ফাঁকি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর