বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির জন্য কোনো জাদুকরী যন্ত্র নেই। অর্থনীতির প্রতিটি ছোট কোনায় দৃষ্টি দিতে হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, তা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির পথে অগ্রসর হতে হলে বাস্তববাদী ও অংশীদারিভিত্তিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ৪৭তম সার্ক ফাইন্যান্স গভর্নরদের গ্রুপ বৈঠক ও সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
‘ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যান্ড সেন্ট্রাল ব্যাংকিং : ব্রিজিং গ্যাপস ইন দ্য সার্ক রিজিয়ন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের সার্ক ফাইন্যান্স উইং। অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিব ও ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা অংশ নেন। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও সার্কভুক্ত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে নিয়মিত সংলাপ, নীতিগত বিতর্ক এবং অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি হচ্ছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সম্মিলিত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পথে ইতিবাচক পদক্ষেপ।’ তিনি জানান, অর্থনৈতিক সংহতি ও আঞ্চলিক আর্থিক ইন্টিগ্রেশনের লক্ষ্যেই এসব সভা গুরুত্ব বহন করে। গভর্নর বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যত পার্থক্যই থাকুক না কেন, গবেষণা, তথ্যের আদান-প্রদান এবং অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি চলতে থাকবে।’ তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় জনগোষ্ঠী এখনো আনুষ্ঠানিক আর্থিক কাঠামোর বাইরে রয়ে গেছে। তাদের অন্তর্ভুক্ত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গভর্নরের ভাষ্য, ‘প্রত্যেক দেশ নিজ নিজ পর্যায়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা একেক দেশ থেকে ভালো উদাহরণ নিচ্ছি, সেগুলো এ ফোরামে ভাগাভাগি করছি এবং অভিযোজন করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘যৌথ গবেষণা, গভর্নর পর্যায়ের আলাপ-আলোচনা ও নীতিমালা ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা অটুট রাখতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ভুটানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়্যাল মনিটারি অথরিটি অব ভুটানের গভর্নর দাশো পেনজোর এবং অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান এবং স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস।
সম্মেলনের আলোচনায় উঠে আসে দক্ষিণ এশিয়ায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বৈষম্য, ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসার, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক সেবায় প্রবেশাধিকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নীতিনির্ধারণী ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ। অংশগ্রহণকারীরা অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারের ওপর জোর দেন। ৪৭তম সার্ক ফাইন্যান্স গভর্নরদের এ সম্মেলন দক্ষিণ এশিয়ায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সহযোগিতার এ মঞ্চ আঞ্চলিক সংহতির নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে।