দেশে ভুল পদ্ধতিতে ও স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা হচ্ছে, যার ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে শিল্প খাত। গ্যাসের ঘাটতির কারণে দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ীর ঋণখেলাপিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না হলে উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন তারা। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত : অন্তর্বর্তী সরকার কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে?’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সহযোগী গবেষক হেলেন মাশিয়েত প্রিয়তি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা এম শামসুল আলম, জলবায়ু ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মনোয়ার মোস্তফা, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক ফয়সাল সামাদ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমই) পরিচালক রাজিব হায়দার ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি আখতার হোসেন অপূর্ব।
এম শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশকে আমদানিনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছে। সব প্রতিষ্ঠান ফ্যাসিবাদের চরিত্র ধারণ করেছে, জনগণের মতামতের তোয়াক্কা নেই। তারা নিজেদের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অনুরোধ করব, আপনার মন্ত্রণালয় নিষ্ক্রিয় করে দিন। কিছু করতে হবে না আপনাদের। এমন অবস্থা তৈরি হচ্ছে, যেখানে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাবে। মালিকরা কর, কিস্তি কিছুই দিতে পারবেন না। সব আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। জলবায়ু ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মনোয়ার মোস্তফা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ ঘটায়। বাজেটে এ খাতে কোনো নীতিগত দিকনির্দেশনা নেই। পরিবেশবান্ধব নীতির কথাও উল্লেখ নেই, যা হতাশাজনক।
ফয়সাল সামাদ বলেন, ২০ বছর ধরে কোনো সুপরিকল্পনা ছাড়া শিল্প খাত নিয়ে বাজেট প্রণয়ন হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না করতে পারলে প্রণোদনা দিন, কিংবা আমাদের ঋণ শোধ আদেশ বন্ধ করুন। সবাই শুধু লাভের দিকটি দেখে, ক্ষতির দিকটি দেখে না। রাজিব হায়দার বলেন, গ্যাসের দাম ১৬ থেকে ৩১ টাকায় উন্নীত হলেও আমরা তা দিচ্ছি। তবুও গ্যাস পাচ্ছি না। আমরা আর কত দিন গ্যাস পাব, সেটাই প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তর বাজেটেও নেই। বিকেএমইএর সহসভাপতি আখতার হোসেন অপূর্ব বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লেও আমরা সংকটে আছি। গ্যাসক্ষেত্র খনন ও উৎপাদনে যাওয়ার উদ্যোগ জরুরি। ড. মোয়াজ্জেম বলেন, জ্বালানি খাতে আগের সরকার অনেক ব্যয় করেছে, কিন্তু অপচয় ও দুর্নীতির কারণে কাঙ্ক্ষিত সুফল মেলেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা-তারা সুশাসনের দিকে মনোযোগ দেবে এবং খাতটির কাঠামোগত রূপান্তরে কার্যকর উদ্যোগ নেবে। মূল প্রবন্ধে হেলেন মাশিয়েত প্রিয়তি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বর্তমানে আটটি বড় সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম আর্থিকসংকট, গ্যাস সরবরাহ ঘাটতি ও ভুলভাবে জ্বালানির দামের সমন্বয়। পাশাপাশি শূন্য নিঃসরণ লক্ষ্যে বাংলাদেশ উল্টো পথে হাঁটছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সরকারের আগ্রহও কম।