বিগত তিন বিতর্কিত নির্বাচনের অভিযোগ তদন্তে কমিশন গঠন করা হয়েছে। কী কারণে ওই তিন নির্বাচন বিতর্কিত হলো এবং এর জন্য কারা দায়ী সেসব বিষয় তদন্ত করে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। কমিশনের রিপোর্টে যারা অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কার্যক্রমে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে পারবে তারা।
এমন ক্ষমতা নিয়েই কাজ শুরু করেছে ওই কমিশন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রথমে কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হলেও পরে কমিশন গঠন করা হয়। ২৯ জুলাই এ নিয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। পাঁচ সদস্যের কমিশনকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ২ নম্বর ব্লকে অফিস সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কমিশন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশন তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। গেজেটে দেওয়া ক্ষমতা অনুযায়ী কমিশন কীভাবে তাদের কাজ এগিয়ে নেবে সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ জন্য সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের সাপোর্ট লাগবে ও লোকবল প্রয়োজন হবে তা নিয়ে আলোচনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিগগিরই তাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
পাঁচ সদস্যের এ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে হাই কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব শামীম আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক, আইনজীবী তাজরিয়ান আকরাম হোসাইন এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল আলীম। এ নিয়ে জারি করা গেজেটে বলা হয়েছে-২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ তিনটি নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এসব নির্বাচনে নানা কৌশলে জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার ভূলুণ্ঠিত করে সাজানো প্রক্রিয়ায় একটি বিশেষ দলকে নির্বাচিত করার জোরালো অভিযোগ রয়েছে। কমিশনকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিশনের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আপাতত পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কাজের পরিধিতে বিচারিক বিষয় থাকায় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত কমিশনের কেউই গণমাধ্যমের মুখোমুখি না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ এ নিয়ে ভবিষ্যতে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে। তিনি বলেন, আমাদের কাজের পরিধি ব্যাপক। সরকার যে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে তার মধ্যে কাজ শেষ করাটা একটু কঠিন হবে বলে মনে করি।
কমিশনের কার্যপরিধিতে ৯টি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- বিগত ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসমূহর বিষয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক, দেশি ও বিদেশি তদারকি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ করবে। এসব নির্বাচনের বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এবং সার্বিকভাবে উল্লিখিত বিষয়সমূহের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ ও বিশ্লেষণ করবে কমিশন। রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ ও জনগণের ভোটাধিকার প্রদান বাধাগ্রস্ত করতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল ও সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করবে। নির্বাচনগুলোর তৎকালীন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হবে। নির্বাচন কার্যক্রমে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হবে। তৎকালীন নির্বাচন কমিশনসমূহের বিরুদ্ধে উত্থাপিত আর্থিক অনিয়মের অভিযোগগুলো যাচাই ও অনুসন্ধান করা হবে। বিশ্লেষণের ভিত্তিতে উল্লিখিত নির্বাচনসমূহে অনিয়মের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করবে কমিশন। ভবিষ্যতের সব নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও মানসম্পন্ন পর্যায়ে উপনীত করার লক্ষ্যে সুচিন্তিত সুপারিশ দেওয়া হবে। প্রয়োজনে যে কোনো দপ্তরের দলিল দস্তাবেজ তলব ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে কমিশন।