মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্বে সম্মতি দিয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। দীর্ঘদিনের এই সংঘাতের স্থায়ী অবসানের লক্ষ্যে এটি একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার ঠিক দুই বছর দুই দিন পর এই ঘোষণা এলো। ওই হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানে ৬৭ হাজারের ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মিশরে তিন দিনের নিবিড় পরোক্ষ আলোচনার পর এই সম্মতি এলো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ইসরায়েল এবং হামাস উভয় পক্ষই শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্বে স্বাক্ষর করেছে।
চুক্তির আওতায় যা যা ঘটবে
জিম্মি মুক্তি: ট্রাম্প বলেন, এর অর্থ হলো সব জিম্মিকে খুব শীঘ্রই মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজায় ৪৮ জন জিম্মি আছেন, যার মধ্যে ২০ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হয়।
ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার: চুক্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইসরায়েল তাদের সেনাদের একটি নির্দিষ্ট সীমানা থেকে প্রত্যাহার করে নেবে।
যুদ্ধের সমাপ্তি: হামাস নিশ্চিত করেছে যে চুক্তিটি গাজার যুদ্ধের সমাপ্তি নিশ্চিত করবে।
মানবিক সাহায্য ও বন্দি বিনিময়: হামাস ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, মানবিক সাহায্য প্রবেশে অনুমতি এবং জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তিকে ইসরায়েলের জন্য এক মহান দিন বলে অভিহিত করেছেন।
এরপর কী হবে?
মন্ত্রিসভার অনুমোদন: ইসরায়েলের সরকার আজ (বৃহস্পতিবার) চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য ভোট দেবে।
সেনা প্রত্যাহার: হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মতে, মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলে ইসরায়েল সম্ভবত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে ইসরায়েল।
জিম্মি মুক্তি: সেনা প্রত্যাহারের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শুরু হবে জিম্মি মুক্তি প্রক্রিয়া। যার মধ্যে হামাসকে জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে। কর্মকর্তার মতে, জিম্মি মুক্তি সম্ভবত সোমবার থেকে শুরু হবে।
কী বিষয় এখনও অস্পষ্ট?
ট্রাম্পের ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনার অংশবিশেষ মাত্র এই প্রথম পর্ব। কিছু জটিল বিষয় এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
হামাসের নিরস্ত্রীকরণ: ট্রাম্পের পরিকল্পনার একটি প্রধান দিক হলো হামাসের অস্ত্র সমর্পণ। হামাস আগে জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা অস্ত্র ছাড়বে না। এই বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি।
গাজার ভবিষ্যৎ শাসন: ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজার প্রশাসনে হামাসের কোনো ভবিষ্যৎ ভূমিকা থাকবে না। সেখানে প্রথমে একটি টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটি দিয়ে সাময়িকভাবে শাসন কাজ পরিচালনা করা হবে। পরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। নেতানিয়াহুর জোটের কট্টরপন্থীরা, যারা গাজায় নতুন ইহুদি বসতি স্থাপন করতে চায়, তারা এই পরিকল্পনায় আপত্তি জানাতে পারে। হামাসও জানিয়েছে, গাজার প্রশাসনে তারা এখনও কোনো ভূমিকা রাখার আশা রাখে।
ফিলিস্তিনি বন্দিদের তালিকা: বুধবার রাত পর্যন্ত হামাস ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেতে যাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের চূড়ান্ত তালিকা পায়নি। ২০-দফা পরিকল্পনায় ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ৭ অক্টোবরের পর আটক ১৭শ' জন গাজাবাসীকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল