অবশেষে কিছুটা শান্তির আভাস মিলছে গাজায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ২০ দফা শান্তি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। জানা গেছে যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রাথমিক একটি চুক্তিতেও সই করে ফেলেছে বিবদমান দুই পক্ষ হামাস ও ইসরায়েল। তবে সেই চুক্তি আর শান্ত্রি প্রক্রিয়া কতোটা স্থায়ী হবে সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবুও এই চুক্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে যুদ্ধ আর অনাহারে ক্লিষ্ট গাজা উপত্যকায়। সেই সাথে বিশ্ব নেতারাও একে স্বাগত জানিয়েছেন।
এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের পথ সুগম হলো। এর পাশাপাশি গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং সেখানে মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
শান্তি চুক্তির খবর নিশ্চিত হওয়ার পর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে জোরালো সমর্থন এসেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তিকে ইসরায়েলের জন্য একটি মহান দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভায় চুক্তিটি অনুমোদনের কথা জানিয়েছেন তিনি। হামাস আলোচনাকে দায়িত্বশীল ও গুরুতর বলে আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের কাছে দাবি জানিয়েছে, যেন ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান বা বিলম্ব ছাড়াই চুক্তিটি কার্যকর করে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চুক্তিটিকে ঐতিহাসিক সুযোগ বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সাথে এর পূর্ণ বাস্তবায়নে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, জিম্মি মুক্তি এবং মানবিক সহায়তা দ্রুত প্রবেশের ওপর জোর দিয়ে বলেন, দুর্ভোগের অবসান হতেই হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে আরব ও মুসলিম বিশ্ব, ইসরায়েল, পার্শ্ববর্তী সকল জাতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি মহান দিন বলে স্বাগত জানান। কাতার, মিশর ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদের ধন্যবাদও দেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এটিকে গভীর স্বস্তির মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সব পক্ষকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে সংঘাতের ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী যুদ্ধ অবসানের ভিত্তি তৈরির আহ্বান জানান। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এটিকে শান্তির জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, শান্তি চুক্তির ঘোষণায় গাজার জনগণের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দারা উল্লাসে ফেটে পড়েন। ওয়ায়েল রাদওয়ান নামে এক বাসিন্দা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে যুদ্ধ থেমে গেছে... আমরা খুবই খুশি যে যুদ্ধ থেমেছে, এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। খান ইউনিসের আরেক বাসিন্দা আব্দুল মাজীদ রাব্বো বলেন, যুদ্ধবিরতির জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, রক্তপাত ও হত্যার সমাপ্তি ঘটেছে। আমি একা নই, সমগ্র গাজা উপত্যকা, সমগ্র আরব জনগণ, সমগ্র বিশ্ব এই যুদ্ধবিরতিতে খুশি।
মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহের চিকিৎসক মুসা বিবিসিকে জানান, আমরা দুই বছরের যুদ্ধে অনেক কিছু হারিয়েছি। গাজা উপত্যকা ধ্বংস হয়ে গেছে। সামনে এখনও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে, তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা নিরাপদে থাকব বলে আশা করি।
অন্যদিকে, তেল আবিবের হোস্টেজ স্কোয়ারে জিম্মি পরিবারের সদস্যরাও আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন। ইসরায়েলি জিম্মি মাতান জাঙ্গাউকারের মা আইনাভ জাঙ্গাউকার আতশবাজি জ্বালিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে বলেন, তারা ফিরে আসছে!... মাতান বাড়ি ফিরছে! হোস্টেজ ফ্যামিলিজ ফোরাম নামে জিম্মি পরিবারের সংগঠনটি এই ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ জিম্মিদের মুক্তিকে একটি আশীর্বাদ বলে অভিহিত করে মার্কিন ও ইসরায়েলি নেতাদের ধন্যবাদ জানান।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল