ভারতের রক্তচাপ বাড়িয়ে পাকিস্তানকে এবার অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ও কৌশলগত সহায়তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি। একদিকে আমেরিকা দিচ্ছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, অন্যদিকে রাশিয়া গোপনে ‘সরবরাহ’ করছে জেট ইঞ্জিন। সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং চিনের দৃঢ় সমর্থন; এই চতুর্মুখী চালে ইসলামাবাদ কি আন্তর্জাতিক মঞ্চে পুরোপুরি একা করে দিচ্ছে নয়াদিল্লিকে? ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে পাকিস্তানের এই একের পর এক সফল পদক্ষেপ।
মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রের ‘অ্যামরাম’ ভয়
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার পাক বিমানবাহিনীকে দূরপাল্লার ‘এআইএম-১২০ অ্যাডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র বা ‘অ্যামরাম’ (AIM-120 AMRAAM) সরবরাহ করতে চলেছে। পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’-এর খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ দফতর (প্রতিরক্ষা দফতর) সম্প্রতি অস্ত্র রফতানির বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামাবাদকে ক্রেতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত পাক এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলিতে এই ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত করা হবে। ‘অ্যামরাম’ হাতে পেলে মাঝ-আকাশের 'ডগফাইট'-এ পাক পাইলটরা যে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষত, এটি দৃষ্টিশক্তির বাইরে হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখে, যার পাল্লা ১৩০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
২০১৯ সালে পুলওয়ামা পরবর্তী আকাশযুদ্ধে ভারতের উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের মিগ-২১ বাইসনকে গুলি করে নামাতে পাকিস্তান এই ‘অ্যামরাম’-এর পুরোনো সংস্করণ ব্যবহার করেছিল। এবার যদি তারা এর আধুনিকতম সংস্করণ ‘এআইএম-১৩০ডি৩’ হাতে পায়, তাহলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর উপর সামরিক চাপ বহু গুণ বাড়বে। রেথিয়ন নির্মিত এই ক্ষেপণাস্ত্রের সি৮ এবং ডি৩ ভ্যারিয়েন্ট তৈরির জন্য ট্রাম্প প্রশাসন ৪ কোটি ১৬ লক্ষ ডলার খরচ করছে।
রুশ ইঞ্জিন: উদ্বেগের নতুন দিক
এই পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদের জন্য 'গোদের উপর বিষফোড়ার' মতো খবর হল, তাদের ‘বন্ধু’ রাশিয়া নাকি গোপনে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন ‘আরডি-৯৩এমএ’ সরবরাহ করছে। বর্তমানে চিন-পাকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে সাড়ে চার প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘জেএফ-১৭ থান্ডার ব্লক থ্রি’। ধারণা করা হচ্ছে, এই লড়াকু জেটে মস্কোর ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে।
‘আরডি-৯৩এমএ’ হল ক্লিমভ নির্মিত পুরনো 'আরডি-৩৩' টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিনের উন্নত সংস্করণ। এই ইঞ্জিন রুশ মিগ-২৯, মিগ-৩৩ এবং মিগ ৩৫-এর মতো ‘মাল্টিরোল’ যুদ্ধবিমানগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এটি ৯১.২ কিলো নিউটনের শক্তি জোগাতে সক্ষম। এর সরবরাহ সরাসরি না হলেও, চিনের মাধ্যমে পাকিস্তান এটি পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। উল্লেখ্য, ২০০০ সালের গোড়া থেকে রাশিয়া চিনকে এই ইঞ্জিন সরবরাহ করে আসছে, যা বেইজিংয়ের শেনিয়াং এফসি-৩১ যুদ্ধবিমান নির্মাণে কাজে লেগেছে। ‘জেএফ-১৭’ যেহেতু যৌথ প্রকল্প, তাই সেই সুযোগ নিচ্ছে ইসলামাবাদ।
ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এই ঘটনা নয়াদিল্লির জন্য কূটনৈতিক অস্বস্তি বাড়িয়েছে। যদিও বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এটি একটি সাধারণ বাণিজ্যিক চুক্তি, কিন্তু এর ফলে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে, তাতে সন্দেহ নেই।
সৌদির সঙ্গে ন্যাটো ধাঁচের চুক্তি, পাশে চিন
সামরিক সরঞ্জামের পাশাপাশি, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও পাকিস্তান বড় সাফল্য পেয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর পশ্চিম এশিয়ার ভারতের অন্যতম মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তান একটি কৌশলগত এবং পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। এই চুক্তি মোতাবেক, তৃতীয় কোনও পক্ষ দ্বারা এক পক্ষ আক্রান্ত হলে, অন্য পক্ষ তাকে যুদ্ধ হিসাবে গণ্য করবে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ উপসাগরীয় আরব দেশটিকে পরমাণু সুরক্ষার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
এর মাধ্যমে পশ্চিম এশিয়ায় একটি 'ইসলামি ন্যাটো তৈরির দাবি তুলেছে পাকিস্তান। যার লক্ষ্য কাতার, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলির থেকে ভারতকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। এর সঙ্গে চিনের ক্রমাগত এবং নিঃশর্ত সমর্থন তো রয়েছেই।
তবে এই পরিস্থিতিতে ভারত একেবারেই তাসহীন, তা ভাবা ভুল। কূটনীতিকদের মতে, আমেরিকা কখনওই বিশ্বস্ত সহযোগী নয়। অতীতেও 'অ্যামরাম' সরবরাহের সময় ওয়াশিংটন শর্ত চাপিয়েছিল যে তা ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না। ২০১৯ সালে পাক বিমানবাহিনী সেই শর্ত লঙ্ঘন করায় আমেরিকা আর্থিক দিক থেকে ইসলামাবাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল