নির্বাচনের আগেভাগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে একযোগে ১১টি অধ্যাদেশ তোলা হচ্ছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। আজ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠেয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অধ্যাদেশগুলো অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।
একই দিনে একসঙ্গে এতগুলো আইনি প্রস্তাব ক্যাবিনেটে তোলার বিষয়টি স্বাভাবিক না হলেও এতে কোনো সমস্যা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এ ধরনের কার্যক্রম নেওয়া যেতে পারে। এতে কোনো বিধিনিষেধ নেই।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সচিব আবদুল আওয়াল মজুমদার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অধ্যাদেশের সংখ্যায় কোনো সমস্যা নেই। দেখতে হবে এতগুলো অধ্যাদেশ একটি ক্যাবিনেটে একযোগে অনুমোদনের ‘ইনটেনশন’ কী- আর অধ্যাদেশের বিষয়বস্তুগুলো কতটা জনগুরুত্বপূর্ণ।
আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যে অধ্যাদেশগুলো চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে- তার বেশির ভাগই আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া সাইবার এবং বিচার বিভাগ সংক্রান্ত বিষয় রয়েছে। এর বাইরে দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ এবং সমস্যাগ্রস্ত পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রস্তাব উঠছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশগুলো হলো- আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, কাস্টমস আইন ২০০৩ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ দ্বিতীয় সংশোধন অধ্যাদেশ, আয়কর আইন ২০২৩ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, সাইবার সুরক্ষা (সংশোধন) অধ্যাদেশ এবং সিভিল কোর্টস অ্যামেন্ডমেন্টস অর্ডিন্যান্স। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, বরিশাল ও রংপুর এই তিন বিভাগীয় শহরের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশও আজ তোলা হবে অনুমোদনের জন্য। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যে আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোই অনুমোদনের জন্য ক্যাবিনেটে তোলা হচ্ছে। সংসদ কার্যকর না থাকায় সংশোধিত আইনগুলো অর্ডিন্যান্স আকারে জারি হবে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সেগুলো জাতীয় সংসদে পাসের মাধ্যমে তা আইনে পরিণত করবে। সূত্রগুলো আরও জানায়, সরকার দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকগুলো একীভূতকরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য এরই মধ্যে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ অনুমোদন হয়েছে। তবে এর সঙ্গে আমানতকারীদের আমানতের সুরক্ষার বিষয়টি জড়িত। সে কারণে আজকের ক্যাবিনেটে সংকটাপন্ন পাঁচ ইসলামিক ব্যাংককে একটি ব্যাংকে রূপান্তরের প্রস্তাব তোলার পাশাপাশি অনুমোদনের জন্য আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশটিও তোলা হচ্ছে।
যে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার প্রস্তাব উঠছে সেগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।
♦ প্রধান উপদেষ্টার টেবিলে যাচ্ছে পাঁচ ইসলামি ব্যাংক এক ব্যাংকে রূপান্তরের প্রস্তাব
♦ চূড়ান্ত অনুমোদন পাচ্ছে আমানত সুরক্ষা সাইবার সুরক্ষা, ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা, সিভিল কোর্টস অর্ডিন্যান্স, আয়কর, কাস্টমস, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন সংশোধন
সূত্র জানায়, সব ব্যাংক মিলে ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক নামে একটি ব্যাংকে রূপান্তরের প্রস্তাব রয়েছে। এ পাঁচটি ব্যাংকের সম্পদ ও জনবল একীভূত করা হবে। এরপর কার্যক্রম পরিচালনায় মূলধন সরবরাহ করবে সরকার। এ ব্যাংকগুলো গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এস আলম ও নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল।
সরকারি সূত্রগুলো আরও জানায়, সিভিল কোর্টস সংশোধনের লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের যে অধ্যাদেশটি তোলা হচ্ছে, এটি আদালতের মর্যাদা ও স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আলোচ্য আইনে আদালতের আগে ‘সহকারী’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি রয়েছে। সে কারণে ‘সহকারী জজ’ ও ‘সিনিয়র সহকারী জজ’ পদবি পরিবর্তন করে যথাক্রমে ‘সিভিল জজ’ ও ‘সিনিয়র সিভিল জজ’ নামে পরিবর্তন হতে পারে। এ প্রসঙ্গে সাবেক সচিব আবদুল আওয়াল মজুমদার বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচনের আগে জরুরি (সংস্কারমূলক) কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ রয়েছে সরকারের। সে কারণে একসঙ্গে এত অধিক অধ্যাদেশ অনুমোদনের জন্য আসতে পারে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একই মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি আইন একইদিনে ক্যাবিনেটে তোলা হয়েছিল অনুমোদনের জন্য। ফলে একসঙ্গে কতগুলো অধ্যাদেশ অনুমোদন হবে- তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধিনিষেধ নেই। অধ্যাদেশ বা আইন অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রয়োজনই মুখ্য।