আরও একবার ফুটবল নিয়ে মেতে উঠেছে বাংলাদেশ। আরও একবার হামজা-সামিত-জামালদের খেলা দেখতে অধীর অপেক্ষায় সমর্থকরা। বাংলাদেশ-হংকং চায়না আজ ঢাকা স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে। এ ম্যাচের টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার ২৪ মিনিটেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়ামে আরও একবার পরীক্ষায় নামছে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার বাংলাদেশ।
গত মার্চে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে শিলংয়ে গিয়েছিলেন হামজারা। সেই ম্যাচে পরফরম্যান্স করে দর্শকদের মন ভরিয়েছে বাংলাদেশ। ড্র করার পরও হতাশ হয়নি কেউ। এমনকি গত জুনে সিঙ্গাপুরের কাছে ঘরের মাঠে পরাজয়ের পরও হতাশা তেমন একটা আচ্ছন্ন করেনি। তবে হংকং চায়নার বিপক্ষে ম্যাচটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ ম্যাচ ঘিরে দর্শকদের আগ্রহ বেশ চাপ তৈরি করেছে দলের ওপরও। জিতলেই ভবিষ্যতের পথে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও তাই মানছেন। তিনি বলছেন, ‘আমাদের প্রতি আশা অনেক বেশি। আমরা আগের ম্যাচের ভুলগুলো এবার আর করতে পারি না। আমাদের হংকং ম্যাচে ভালো করতে হবে। এ ম্যাচে জিততে পারলে সামনের পথ অনেক সহজ হবে।’ বাংলাদেশ-হংকং চায়নার সর্বশেষ সাক্ষাৎ ২০১৪ সালের এশিয়ান গেমসে। এটা অবশ্য জাতীয় দলের খেলা ছিল না। তারপরও ম্যাচটার গুরুত্ব কম নয়। দুই দলের লড়াইয়ে হংকং জয় পেয়েছিল ২-১ গোলে। সেই ম্যাচে খেলেছিলেন জামাল ভূঁইয়া। লাল-সবুজের জার্সিধারী দলের অধিনায়ক বলছেন, ‘হংকংয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। এবার মাঠে নিজেদের কাজটা করার পালা। যারা খেলবেন তাদের শতভাগ দিয়েই খেলতে হবে।’
বাছাইপর্বে ‘সি’ গ্রুপে ৪ পয়েন্ট করে সংগ্রহ করেছে সিঙ্গাপুর ও হংকং চায়না। ১ পয়েন্ট করে সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। এই গ্রুপ থেকে শীর্ষ দল খেলবে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে। সামনের প্রতিটা ম্যাচই বেশ গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। এজন্যই সবকটা ম্যাচ জিততে চান কাবরেরা। অবশ্য তিনি আপাতত আজকের ম্যাচ নিয়েই ভাবছেন। কোচ কাবরেরা বলছেন, ‘আমাদের প্রস্তুতিটা ভালো হয়েছে। আমরা ১০ দিন ধরে অনুশীলন করছি। আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচ অপেক্ষা করছে। আশা করছি দর্শকরা মাঠে এসে আমাদের সমর্থন দেবেন। আমাদের মানসিক অবস্থা বেশ ভালো। প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে পারব। আমাদের সামনে আরও ম্যাচ আছে। আপাতত কালকের (আজকের) ম্যাচটা নিয়ে ভাবছি।’ এ ম্যাচ জিততে পারলে পরেরগুলোতেও ভালো করার প্রেরণা পাওয়া যাবে বলে মনে করেন এই স্প্যানিশ কোচ।
বাংলাদেশ দল আজ তিন পয়েন্টের জন্যই লড়াই করবে। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আমাদের জন্য এটা ডু-অর-ডাই ম্যাচ।’ কোচও অধিনায়কের সঙ্গে একমত। কাবরেরা বললেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করব। তিন পয়েন্ট নিয়েই (জয় নিয়ে) মাঠ ছাড়তে চাই।’ হংকংকে নিজেদের মানের দলই মনে করেন কাবরেরা। তবে হংকং চায়নায় বর্তমানে বিদেশি কিছু ফুটবলার আছেন। ব্রাজিলের পাঁচজন ফুটবলার ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে পাসপোর্ট গ্রহণ করে হংকংয়ের হয়ে খেলছেন। এদের মধ্যে ফার্নান্দো, জুনিনহো, ডুডুদের নিয়ে এক ভয়ংকর দল হংকং। অবশ্য কোচ কাবরেরা তাদের এখন আর বিদেশি হিসেবে বিবেচনা করতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘গ্রুপের চারটা দলই কাছাকাছি লেভেলের। হংকং ন্যাচারালাইজড ফুটবলার আছে। আমরা সেভাবে ভাবছি না। তারা হংকং জাতীয় দলের ফুটবলার। আমরা সেভাবেই ভাবব।’
বাংলাদেশে বর্তমানে খেলছেন হামজা-সামিতরা। তাদের নিয়ে লাল-সবুজের দল এখন অনেক বেশি গোছানো। অনেক বেশি শক্তিশালী। এই দল নিয়েই সামনের দিনগুলোতে সফলতায় আসতে চান কাবরেরা। জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্প প্রায় ১০ দিন আগে শুরু হলেও হামজা ও সামিত সোম এসেছেন অনেকটা দেরি করে। বিশেষ করে সামিত সোম মাত্র একটা সেশন অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছেন। কোচ বলছেন, ‘সামিত বেশ ভালো অবস্থায় আছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমরা কালই (আজ) নিব।’ জায়ানের ব্যাপারেও আশাবাদী কাবরেরা। তিনিও থাকতে পারেন দলে। প্রস্ততি শেষ। বক্তব্যের পালাও শেষ। এবার পরীক্ষা। আজকের পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন কি কোচ কাবরেরা?