অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে পদচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থকদের গ্রেপ্তার করছে বলে অভিযোগ করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গতকাল সংস্থাটির প্রতিবেদনে এ অভিযোগ করা হয়।
প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ বলেছে, বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘের মানবাধিকার দলের উচিত নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো। একই সঙ্গে মানবাধিকার রক্ষা ও রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করা উচিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে টানা তিন সপ্তাহের সহিংস বিক্ষোভে প্রায় ১৪০০ জন নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপরই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে ২০২৫ সালের ১২ মে সরকার সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) করে। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় দলটির সভাসমাবেশ, প্রকাশনা ও অনলাইন কার্যক্রমও বন্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও শান্তিপূর্ণ অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তারে আইনটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের অনেকের বিরুদ্ধেই হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটক রয়েছেন। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ হেফাজতে নির্যাতন ও চিকিৎসা বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন। প্রতিবেদনে চলতি বছরের ২৮ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি সংগঠন স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে আলোচনা সভার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, অনুষ্ঠানের সময় একদল লোক মব সৃষ্টি করে সেখানে হামলা চালিয়ে অংশগ্রহণকারীদের ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বলে গালমন্দ করে। পুলিশকে ডাকা হলে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করে ১৬ জন অংশগ্রহণকারীকে আটক করা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেন শেখ হাসিনার সময়কার মতো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার একই চক্রে না জড়িয়ে পড়ে। সরকারের উচিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার বন্ধ করা। আইনটি রাজনৈতিক দমনপীড়নের সমার্থক হয়ে উঠছে।