সিলেট নগরীকে দুই ভাগ করেছে সুরমা। আর সুরমার দুই পাড়কে যুক্ত করেছে ঐতিহ্যের ক্বিন ব্রিজ। লোহার তৈরি লালব্রিজটি এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। হারিয়েছে ভারী যান চলাচলের সক্ষমতা। কিনব্রিজের পাশে একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের দাবি সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের। সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সিলেটবাসীকে দেখিয়েছিলেন এই সেতুর স্বপ্ন। স্বপ্নের সেই সেতু বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছিল বিদেশি সংস্থা ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)’। প্রকল্পে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছিল ব্যাংকটি। কিন্তু অবশেষে স্বপ্নের সেই সেতু প্রকল্পটি বাতিল হয়ে গেছে। অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জায়গা নেই এমন অজুহাতে ঝুলন্ত সেতুর প্রকল্প বাদ দিয়ে ক্বিনব্রিজের সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)। তবে সচেতন মহলের দাবি, সেতুটি নির্মিত হলে সিলেটের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটন সম্ভাবনাও বাড়ত।
সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে এনডিবি বাংলাদেশের পাঁচটি প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায়। ঋণদানকারী ব্যাংকটি প্রতিটি প্রকল্পে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয়। এ প্রকল্পগুলোর একটি ছিল সিলেট নগরীতে সুরমা নদীর ওপর ক্বিনব্রিজের পাশে নতুন একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ। প্রকল্পগুলো নিয়ে ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কনফারেন্স রুমে এনডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন সেতুর সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করে। তারা সুরমা নদীর নাব্যতা, বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ এবং সেতুটি কত উচ্চতায় নির্মাণ করতে হবে সেই সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। সওজের পক্ষ থেকেও ‘প্রি ডিটেলস প্রজেক্ট প্রফর্মা-পিডিপিপিও তৈরি করা হয়। এই পিডিপিপি মন্ত্রণালয় হয়ে এডিবির কাছে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশে গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদল হওয়ায় প্রকল্পটির অগ্রগতি আটকে যায়।
এ প্রসঙ্গে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমীর হোসেন জানান, ঝুলন্ত সেতুর জন্য অনেক লম্বা অ্যাপ্রোচ সড়কের প্রয়োজন। কিন্তু কিনব্রিজের পাশে সুরমার উভয় প্রান্তে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জায়গা নেই। তাই এই সেতু নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। এর পরিবর্তে কিনব্রিজের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এখন সেতুটি দিয়ে ৩ টন পর্যন্ত ভারী যানবাহন চলাচলের সক্ষমতা আছে। এটি আরও কীভাবে বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।