মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্সের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সমর্থন নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ভ্যান্স স্পষ্ট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেনকে সরাসরি কোনো অর্থ দেবে না। এর পরিবর্তে, যদি ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে চায়, তবে তারা মার্কিন অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারবে। এই ঘোষণায় ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা পাওয়ার ধরন নিয়ে বড় পরিবর্তন আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
গত ১০ আগস্ট ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স বলেন, মার্কিন জনগণ আর ইউক্রেনে নিজেদের করের টাকা পাঠাতে রাজি নয়। লন্ডনে পশ্চিমা দেশগুলোর এবং ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরেই তার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। ভ্যান্সের এই বক্তব্যটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন আগামী ১৫ আগস্ট আলাস্কায় মার্কিন ও রুশ রাষ্ট্রপতির শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে।
ভ্যান্স ইউরোপীয় নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যদি তারা এই সংঘাত নিয়ে সত্যিই চিন্তিত হন, তবে তাদের উচিত এর তহবিলে আরও বড় ভূমিকা রাখা। তিনি আরও বলেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আর কোনো অর্থ দেবে না, তবে ইউরোপীয় দেশগুলো যদি মার্কিন অস্ত্র নির্মাতাদের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনতে চায়, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আপত্তি নেই। এটি একইসঙ্গে ইউক্রেনকে সাহায্য এবং মার্কিন অস্ত্র শিল্পকে লাভবান করার একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কয়েকদিন আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে কিছু অঞ্চল বিনিময় করা যেতে পারে। ট্রাম্পের মতে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এমন একটি চুক্তির জন্য আইনি উপায় খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু জেলেনস্কি এই ধরনের কোনো চুক্তির সম্ভাবনা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের এক ইঞ্চি ভূমিও তিনি বা আর কেউ ছেড়ে দেবেন না। জেলেনস্কির এই অনমনীয় মনোভাবের কারণে ইউক্রেন ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
জেলেনস্কি কাদের ভরসায় এই সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ইউরোপের যে দেশগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন দিচ্ছে, তাদের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স 'কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং' এর সদস্য হলেও তারা সেনা পাঠানোর বিষয়ে কিছু শর্ত দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, কেবল রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে তবেই তারা 'শান্তি রক্ষা'র জন্য সেনা পাঠাতে পারে। অন্যদিকে জার্মানি, পোল্যান্ড, স্পেন, এবং ইতালিসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে নারাজ। এই দেশগুলোর সামরিক বাহিনীতে এমনিতেই জনবলের ঘাটতি রয়েছে। তাই, জেলেনস্কির একার পক্ষে এই সংঘাত চালিয়ে যাওয়া কতটা সম্ভব, তা নিয়ে এখন গভীর সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
সূত্র: ফক্স নিউজ
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল