দেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক ভয়াবহ পরিকল্পনা করে যাচ্ছেন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ৫ আগস্ট নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর এবার তাদের টার্গেট ১৫ আগস্টের পর যে কোনো দিন। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আবাসিক এলাকা লেক টাউনে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। রাজধানীতে একাধিক গোপন বৈঠক করার পর বেশ কিছু নেতা-কর্মী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের কাছ থেকেই পাওয়া গেছে এমন তথ্য। সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ প্রথমে গত ৫ আগস্ট ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েছিল। এর অংশ হিসেবে সারা দেশ থেকে অন্তত ২০ লাখ লোক ঢাকায় আনার তৎপরতা শুরু হয়। তবে পুলিশ সদর দপ্তর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অন্তত ৩২ জনকে আটকের পর তা ভেস্তে যায়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আগস্টকে ঘিরে দেশ অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয় গত জুনে। কোথা থেকে কীভাবে, কী পরিমাণ লোক সমাগম ঢাকায় করা হবে এবং অর্থায়ন কারা কীভাবে করা হবে- এমন সব পরিকল্পনা লেক টাউনে অ্যাপলো হাসপাতালের পাশে ভাড়া নেওয়া বাসায় বসে করা হয়। এই বাসাতেই অবস্থান করছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার। তাদের মদতে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জুনের প্রথম সপ্তাহে মিরপুর ডিওএইচএসের ১০ নম্বর রোডের একটি বাসায় বৈঠক করে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতারা। এরপর তারা ৮ জুলাই কে বি কনভেনশন হলে বৈঠক করেন। ১০ জুলাই পূর্বাচলের সি শেল পার্কে আরেকটি বৈঠক করেন। সর্বশেষ তেজগাঁও এলাকার একটি ক্যাফে এবং কাঁটাবনের একটি বাসায় দুটি বৈঠকে মিলিত হন তারা। এসব বৈঠকে অংশ নেওয়া সেনা হেফাজতে থাকা মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে বুধবার রাতে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় তাকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত। ডিবি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সুমাইয়া অনেক তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন- বিভিন্ন যোগ্যতার মাপকাঠিতে তারা বৈঠকে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বাছাই করতেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের নেতা, উপজেলা পর্যায়ের এবং জেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। সিগন্যাল অ্যাপসের মাধ্যমে কোড নম্বর পাঠিয়ে তাদের একত্রিত করা হয়েছিল। তার আগে বৈঠকে অংশ নেওয়া সদস্যদের গুগল শিটে তালিকা করা হয়। এদের নিয়ে হওয়া চারটি বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে রাখা হয়নি। বেশ কিছু নেতা লন্ডন থেকে বক্তব্য দেন। ভারত ও লন্ডন থেকে যারাই বক্তব্য দিয়েছেন তাদের কারও ছবি কিংবা নাম দেখানো হয়নি। সবাই অডিও রেকর্ডে বক্তব্য দিয়েছেন। আর বৈঠকের খবরগুলো জানাজানি হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ছোট ছোট টেলিগ্রাম গ্রুপগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে ছোট ছোট আরও কিছু গ্রুপ খোলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) মো. রেজাউল করিম এ প্রতিবেদককে বলেন, যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে ঢাকাসহ সারা দেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তৎপরতার ওপরও নজরদারি করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত ২৬ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাসহ মোট ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের। পুলিশ বলছে, গোপন বৈঠকগুলোতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। তারা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করা হয়।