ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রপ্তানিনির্ভর তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ ও নাশকতার আশঙ্কা করছে শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের সময় বকেয়া মজুরি বা অন্যান্য ইস্যুতে শ্রমিকরা রাস্তায় নামলে বহিরাগত গোষ্ঠী তা কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে শিল্পাঞ্চলগুলোতে যাতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন তাঁরা। বুধবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে সংগঠনটির সঙ্গে সেনাবাহিনীর নবনিযুক্ত নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিংয়ের (জিওসি) বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি, যেন নির্বাচনের সময় কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে কোনো অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে। এ সময়ে আমরা অতিরিক্ত সহায়তা প্রত্যাশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ধারণা নির্বাচনের সময় পোশাক খাতে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। আমরা চাই আগে থেকেই সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’ বৈঠকে উপস্থিত বিজিএমইএর পরিচালক শেখ হোসেন মুহাম্মদ মুস্তাফিজ বলেন, ‘নির্বাচনের সময় শ্রমিক অসন্তোষের সুযোগ নিয়ে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারে। আমরা চাই যে কোনো পরিস্থিতিতেই যেন এ অস্থিরতা ছড়িয়ে না পড়ে।’ তিনি জানান, ‘অস্থিরতার অন্যতম কারণ হতে পারে মজুরিসংক্রান্ত সমস্যা বা হঠাৎ উ™ূ¢ত অসন্তোষ। আমরা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি মজুরি ইস্যুতে। কোনো কারখানা যদি মজুরি দিতে না পারে, সেখানে সমাধান খুঁজে দিচ্ছি, প্রয়োজনে অনুপস্থিত মালিকদের সম্পদ বিক্রির মাধ্যমেও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
তবে বিজিএমইএ নেতাদের প্রধান উদ্বেগ হলো নির্বাচনের সময় হঠাৎ করে শ্রমিকদের সড়কে নেমে পড়া। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতাই এখন সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করেন শেখ হোসেন মুহাম্মদ মুস্তাফিজ।
এদিকে ওই দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক বৈঠকেও তৈরি পোশাক খাতের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান বাবলু বলেন, বৈঠকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে গার্মেন্ট খাতে বড় কোনো অস্থিরতা নেই। তবে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শ্রম পরিদর্শন অধিদপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমানে অন্তত পাঁচটি কারখানায় বকেয়া মজুরি নিয়ে আলোচনা চলছে। ময়মনসিংহের একটি কারখানার শ্রমিক প্রতিনিধিরা সম্প্রতি শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জয়না বাজার এলাকায় এএ ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডের শ্রমিকদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।