শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ভেটেরিনারি টিচিং হসপিটালে (ভেট ক্লিনিক নামেও পরিচিত) নিয়মবহির্ভূত অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের ডাক্তার রূপ কুমারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, ৫০০ টাকার ভ্যাকসিন ১৫০০ টাকায় বিক্রি, চিকিৎসা বাবদ নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি টাকা নিয়ে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রি খাতায় জমা না করে ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করছেন তিনি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়া বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি থেকে সংগ্রহকৃত মেডিসিন ও চিকিৎসাসামগ্রী উচ্চমূল্যে বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে অনুসন্ধানে সেবা প্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া অর্থ এবং রেজিস্ট্রি খাতায় উল্লিখিত অর্থের গরমিল পাওয়া গেছে।
গত ২৫ মে ফার্মগেটের বাসিন্দা সাকের আহমেদ তার পোষা বিড়ালের চোখের চিকিৎসা করাতে এলে ডা. রূপ কুমার বিড়ালের চোখের অপারেশনের পরামর্শ দেন। তবে এই চিকিৎসার জন্য তিনি ৬ হাজার টাকা নেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত চার্জের (১০০০ টাকা) তুলনায় ছয় গুণ বেশি। তবে রেজিস্ট্রি খাতায় ডা. রূপ কুমার এ ক্ষেত্রে খরচ বাবদ উল্লেখ করেছেন ১১০০ টাকা। এ বিষয়ে সাকের বলেন, ‘আমার বিড়ালের চোখে খুবই সমস্যা হচ্ছিল। পরবর্তীতে তিনি চোখের চিকিৎসা দেন এবং ৬ হাজার টাকা নেন।’ অনুসন্ধানে এ ধরনের আরও কয়েকটি অনিয়মের ঘটনা ছাড়াও বহু অপারেশনের রেজিস্ট্রি খাতার তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে। গত ২২ মে নরসিংদী থেকে তিনটি বিড়ালের চিকিৎসা করাতে আসেন মাইশা। তার কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট অপারেশনের ফি নেওয়া হয় ৫৬০০ টাকা। তবে রেজিস্ট্রি খাতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডা. কুমার তাতে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছেন ৩৩০০ টাকা। রেজিস্ট্রি খাতা থেকে ফোন নম্বর নিয়ে ফোন করলে রিসিভকারী বলেন, ‘আমার তিনটা বিড়ালের অপারেশনে ৫৬০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে জেনেছি এই অপারেশন বাবদ ৩০০০ টাকা ফি হওয়ার কথা। ২৩০০ টাকা আমাদের থেকে বেশি নেওয়া হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জানা গেছে, নিয়মিতভাবে ক্যাচট্রেশন ও নিউটার অপারেশনের জন্যও ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়, যা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ফির তুলনায় ৪-৫ গুণ বেশি। মিম কামাল নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তার পোষা বিড়ালকে তিনটি রোগের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য রূপ কুমার ১৫০০ টাকা নেন। কিন্তু পরদিনই তার বিড়ালটি মারা যায়। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেওয়ার পর সমস্যা দেখা দিলে আমি তাকে ফোন করি, কিন্তু তিনি সেটাকে স্বাভাবিক বলে এড়িয়ে যান। ডা. কুমার নিজের ইচ্ছামতো ভেটেরিনারি টিচিং হসপিটাল চালাচ্ছেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে ভেটেরিনারি অনুষদের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ভেটেরিনারি টিচিং হসপিটালের সেবার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই তাদের পোষাপ্রাণী নিয়ে আসছেন। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি, যা শেকৃবির ভেট ডাক্তার হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জা এবং বিব্রতকর। অনেক অভিযোগ এসেছে যে ডা. কুমার চিকিৎসা দিয়ে রেজিস্ট্রি খাতায় লিপিবদ্ধ করেন না। বিষয়টির তদন্ত হওয়া জরুরি। কারণ ক্লিনিক ব্যক্তিগত আয়ের জায়গা নয়, আমাদের সবার।’
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ডা. কুমার বলেন, ‘অতিরিক্ত অর্থ অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং পরবর্তী সাত দিনের ওষুধের জন্য নেওয়া হয়েছে।’ ওষুধ বিক্রির অনুমোদন বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ওষুধ বিক্রি করিনি, ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বিড়ালের ওষুধ সব এক জায়গাতে পাওয়া যায় না। এখন মানবতার খাতিরে হেল্প করলে যদি আমার অন্যায় হয়, তবে আমি অন্যায় করেছি।’ তবে ওষুধ দেওয়ার ব্যাপারে সেবা প্রার্থী মাইশা বলেন, ‘আমাকে কোনো ওষুধ দেয়নি।’ এ বিষয়ে শেকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কেবল জানলাম, তদন্ত করে দোষী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে সব সেবায় মানি রিসিট দেওয়া হবে।’