রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

বার্মিজ আচারের আড়ালে আইস

♦ সবচেয়ে বড় চালানসহ গ্রেফতার ২ ♦ আটক হলে বিল পরিশোধ করতে হয় না ♦ চক্রের সঙ্গে যুক্ত ২০-২৫ জন সদস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

বার্মিজ আচারের আড়ালে মিয়ানমার থেকে দেশে আসে ভয়ংকর মাদক আইস। গত কয়েক বছরে একের পর এক আইসের চালান ধরলেও এবার দেশের ইতিহাসে আইসের সবচেয়ে বড় চালানসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। গতকাল ভোরে যাত্রাবাড়ী থেকে প্রায় ৫ কেজি আইস, বিদেশি অস্ত্র ও গুলিসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা মো. হোছেন ওরফে খোকন ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিক। র‌্যাব বলছে, উদ্ধার হওয়া আইসের মূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে ফোর্সের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর যৌথ অভিযান ছিল এটা। মিয়ানমার থেকে আইসের চালান নৌপথে টেকনাফে আসে। প্রাথমিকভাবে সেখানকার বাসাবাড়িতে রাখা হয়। পরে মাদক ব্যবসায়ীরা নিজস্ব পরিবহনে বিশেষ কৌশলে ঢাকায় সরবরাহ করে। বার্মিজ কাপড় বা আচারের ব্যবসার আড়ালে চলছিল এ ব্যবসা। এ চক্রে ২০-২৫ সদস্য রয়েছে। এরই মধ্যে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশকে ঘিরে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আইসের কারখানা। গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের রয়েছে গভীর সুসম্পর্ক। সেখান থেকে আনা মাদকের চালান   যদি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয় তবে ওই চালানের কোনো বিল পরিশোধ করতে হয় না।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার খোকনের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফে। তার বাবার নাম মো. ইউনুছ। আর মোহাম্মদ রফিক একই উপজেলার মো. সুলতানের ছেলে। তাদের কাছ থেকে দেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড  গোলাবারুদ, দুটি মোবাইল, তিনটি দেশি-বিদেশি সিমকার্ড এবং নগদ ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। এ চক্রটি অন্তত পাঁচ বছর ধরে ইয়াবার কারবার করে আসছে। চক্রের অন্যতম হোতা খোকনের বিরুদ্ধে এর আগে সাতটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। মোহাম্মদ রফিক এ চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। টেকনাফে অটোকিশাচালকের ছদ্মবেশে মাদক পরিবহন ও স্থানান্তর করতেন। ঢাকার উত্তরা, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সিন্ডিকেট সদস্য রয়েছে।

র‌্যাব জানায়, আইস বা ক্রিস্টাল মেথে শতভাগ এমফিটামিন থাকায় এটা বিশ্বজুড়েই ভয়ংকর মাদক হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে এই মাদক ধরা পড়ছে। মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছে বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরা। আর এই সুযোগে প্রতিবেশী দেশটির মাদক ব্যবসায়ীরাও প্রলুব্ধ করতে গ্রহণ করছে বিভিন্ন ধরনের ‘বিজনেস স্ট্র্যাটেজি’। যার মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কখনো ভয়ংকর মাদক আইসের চালান ধরা পড়লে তার মূল্য পরিশোধ করতে হতো না ব্যবসায়ীদের। গ্রেফতারকৃতরা আগে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ছিল। অধিক মুনাফার আশায় তারা কয়েক মাস ধরে আইসের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা এবং আইসের বেশির ভাগই দেশে আসত নদীপথ ব্যবহার করে। সাধারণত সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার সমুদ্রে নৌপথে মালামাল স্থানান্তর করে চোরাকারবারিরা। এ সময় তারা নিজস্ব সিগন্যাল ব্যবহার করে থাকে। গ্রেফতারকৃত খোকন এর আগেও বেশ কয়েকটি আইসের চালান নিয়ে এসেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক একটি অভিজাত শ্রেণির মধ্যে আইসের ডিমান্ড রয়েছে। তিনি বলেন, আটক হওয়া আইসের চালানটি প্রথমে টেকনাফে রাখা হয়। পরে বিভিন্ন সময় নৌপথ ব্যবহার করে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করে চালানটি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আসে। র‌্যাব পরিচালক বলেন, আইস ব্যবসায় জড়িত টেকনাফে এবং ঢাকায় অনেকের নাম পেয়েছি। গুলশান, বনানী, মিরপুর ও মোহাম্মদপুরকেন্দ্রিক বিশেষ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এসব জায়গায় আইস পৌঁছে দেওয়ার জন্যই চালানটি আনা হয়েছিল। চালান পৌঁছে দেওয়ার পরই টাকা সংগ্রহ করত তারা। যেহেতু মোটা অঙ্কের টাকার বিষয় ছিল, তাই অন্যতম হোতা খোকন সঙ্গে এসেছিল। তিনি বলেন, ১ গ্রাম আইসের দাম মিয়ানমারে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। কিন্তু সেটা বাংলাদেশে বিক্রি হয় ১৫-২০ হাজার টাকায়। কখনো কখনো ২৫ হাজার টাকায়ও ১ গ্রাম আইস দেশে বিক্রি হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর