বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

গ্যাসের কেনা মূল্যই দিতে হবে ব্যবসায়ীদের

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্যাসের কেনা মূল্যই দিতে হবে ব্যবসায়ীদের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা তো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি, গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন, পৃথিবীর কোন দেশ বিদ্যুতে, গ্যাসে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না। ইংল্যান্ড বিদ্যুতের মূল্য দেড় শ ভাগ বৃদ্ধি করেছে। ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর আমরা এখন মাত্র ৫ ভাগ বাড়ালাম, আর বাড়ছে কিছু গ্যাসের দাম। গ্যাস যেটা আমরা ৬ ডলারে স্পট মূল্যে কিনতাম, এলএনজি সেটা এখন ৬৮ ডলার। কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা।’ এ সময় তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা গ্যাস চাইলে সরকার দিতে পারবে। কিন্তু যে মূল্যে বাইরে থেকে কেনা হবে, সেই মূল্যই তাদের দিতে হবে। জনগণের টাকা দিয়ে গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে গতকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব এখানেই শেষ হলো ঘোষণা করে বলেন, মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হলো। ৭১ বিধিতে প্রাপ্ত নোটিসসমূহের নিষ্পত্তির কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। এর পরই মুজিবুল হক চুন্নু স্পিকারের কাছ থেকে ফ্লোর পেয়ে বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে পর্ব তো শেষ হয়ে গেল। এখন তো আর উত্তর পাওয়ার বা প্রশ্ন করার সুযোগ নেই।’ এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা হইচই শুরু করেন। স্পিকার জানতে চান, ‘আপনি কী হিসেবে কথা বলছেন?’ এ সময় চুন্নু বলেন, ‘আমি পয়েন্ট অব অর্ডারে বলছি।’ তিনি বলেন, এখন কিন্তু দুটি বিষয় খুব আলোচনায় এসেছে। প্রথমত ৪৫০ কোটি ডলারের আইএমএফের যে ঋণ নেওয়া হয়েছে, সে ঋণের বিষয়টা। এটা পাওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে। আরেকটি হলো, ওই ঋণের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। অনতিবিলম্বে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। এর ফলে কৃষিপণ্য, যেটা উৎপাদন করে, এর সামগ্রিক উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। যদি বেড়ে যায়, এর ফলে আমাদের অর্থনৈতিক যে চাপ আছে, তা বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। কীভাবে সরকার এর মোকাবিলা করবে?

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘ইতোমধ্যে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আমাদের দেশে এসেছিলেন। এর আগে তিনি যখন পাকিস্তানে যান, তিনি পাকিস্তান সফরের পর পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ) পার্টি নামে যে দল, সে দল ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যায়। এই ভদ্রলোক আসার পর অনেকে মনে করেছিলেন এ দেশেও কিছু একটা হয়ে যাবে। তবে তিনি যাওয়ার পর সরকারকে বেশ একটু খুশি খুশি লাগছে। আর অন্য দলটিও দেখছি বেশ খুশি। তবে আমরা জাতীয় পার্টি ওইভাবে নিচ্ছি না। স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছি। তবে তার সফর নিয়ে রাজনৈতিকভাবে একটা গুঞ্জন আছে। অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে কিছু একটা হয় কি না।’ তার এসব বক্তব্যের সময় সংসদে সরকারি দলের সদস্যরা হইচই করে আপত্তি জানাতে থাকেন। এক পর্যায়ে স্পিকার তার মাইক বন্ধ করে দেন, বসতে অনুরোধ করেন। এর পরও চুন্নু তার বক্তব্য দিয়ে যেতে থাকেন। পরে স্পিকার আবার মাইক চালু করেন। চুন্নুকে বলতে শোনা যায়, এ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি উত্তর দেন তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে, জাতি জানবে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা উঠে দাঁড়ান। তিনি বলেন, ‘এ প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হবে? ভেবেছিলাম আজ আর কথা বলব না। কিন্তু প্রশ্ন যখন হয়েছে আমি উত্তর দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইএমএফ ঋণ দেয়, যে দেশ ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে তাদের। এখানে তেমন কোনো শর্ত দিয়ে কিন্তু আমরা ঋণ নিইনি। অর্থনৈতিকভাবে... যেমন বিদ্যুৎ, আমরা তো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি, গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন, পৃথিবীর কোন দেশ বিদ্যুতে, গ্যাসে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, সরবরাহ নিশ্চিত করেছি। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইংল্যান্ড বিদ্যুতের দাম দেড় শ ভাগ বৃদ্ধি করেছে। ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর আমরা এখন মাত্র ৫ ভাগ বাড়ালাম, আর বাড়ছে কিছু গ্যাসের দাম। গ্যাস যেটা আমরা ৬ ডলারে স্পট মূল্যে কিনতাম এলএনজি, সেটা এখন ৬৮ ডলার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিতে আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিচ্ছি। এখন গ্যাস উৎপাদন, গ্যাস বিতরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিদ্যুৎ বিতরণে যদি ৪০-৫০ হাজার, ৬০ হাজার কোটি টাকা আমাকে ভর্তুকি দিতে হয়, তাহলে সেটা কী করে দেব? দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যে চেষ্টা, সেটার কিছু সফলতা কিন্তু আমরা দেখাতে পেরেছি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি কিন্তু কিছুটা কমেছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় ১৩.৩ শতাংশ হচ্ছে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি। পৃথিবীর সব দেশেই এ অবস্থা বিরাজমান। বাংলাদেশ এখনো সে অবস্থায় পড়েনি। আর বিদ্যুতের মূল্য যদি বৃদ্ধি পায়, মানুষ যদি একটু সাশ্রয়ী হয়, যেমন আমরা- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবন, বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয় তাহলে কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘গ্যাস অতি অধিক দামে (কিনতে হয়), যারা আমাদের বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা- এখানেও অনেকে আছেন, তাদের তো আমি স্পষ্ট বলেছি গ্যাস আমরা দিতে পারব। কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসব, সেই মূল্য যদি আপনারা দেন, তাহলে আমরা গ্যাস দিতে পারব। এখন যেটুকু বাড়িয়েছি, তারা যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চান, তাহলে যে মূল্যে কেনা হবে সেই মূল্য তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আর এটা ভুলে যাবেন যে ভর্তুকির টাকাটা তো জনগণেরই টাকা। আমি যেই টাকাটা (ভর্তুকি দিই), যারা আমাদের বিত্তশালী, তারাই তো, যত মূল্য কম থাকে, সব থেকে লাভবান কারা? যারা বিত্তশালী তারা। যারা সাধারণ মানুষ তারা কিন্তু ঠিকমতো বিল দেয়। বিত্তশালীরা আরাম করবে আর এই স্বল্প মূল্যে পাবে, সেটা কী করে হবে? কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি।’

এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে, সেটা তো জনগণেরই টাকা। আর দ্রব্যমূল্য সারা বিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো যারা নিম্ন আয়ের বা মধ্যম আয়ের, তাদের জন্য কিন্তু আমরা ন্যায্যমূল্যের কার্ড দিয়েছি। সেখানে মানুষ মাত্র ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন তেল, চিনি, ডাল এগুলো যাতে সীমিত আয়ের যারা তারা কিনতে পারে, এর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এর থেকে নিম্ন আয়ের যারা, তাদের জন্য মাত্র ১৫ টাকায় ওএমএসের চাল আমরা দিচ্ছি। সেই সঙ্গে তেল, ডাল, চিনিও তারা কম দামে কিনছে। আর হতদরিদ্র, যারা কিছুই কিনতে পারে না, তাদের কিন্তু আমরা বিনা পয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। যারা স্বল্প আয়ের তারা যাতে কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এ ব্যবস্থা করছি।’

স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স হিসেবে কাজ করবে : সরকারদলীয় সদস্য মো. হাবিবুর রহমানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সফলতার ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিল্প, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আর্থিক খাত ইত্যাদির দক্ষতা বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের সমপর্যায়ে নেওয়ার লক্ষ্যে পাঁচজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রীসহ ৩০ সদস্যবিশিষ্ট স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করে গত বছর ১৬ আগস্ট গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এখন থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট। এ চারটি স্তম্ভের আলোকে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য বাস্তবায়নে ১. কানেকটিভিটি (অবকাঠামো উন্নয়ন), মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ, ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ এবং ইভেন্ট ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নিজে কী পেল তা নিয়ে কখনো ভাবে না : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের জন্য কাজ করে কী পেল তা নিয়ে কখনই তার দল ভাবে না। বরং জনগণের কল্যাণে তারা কী করতে পারে তা-ই বিবেচনা করে। গতকাল সকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের ১৩টি জেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও ৪৫টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের উদ্বোধন করেন, যার মাধ্যমে এ সংখ্যা ১৩৫-এ উন্নীত হয়েছে। ফলে এক-তৃতীয়াংশ তৃণমূল মানুষকে বিনামূল্যে আধুনিক চক্ষু চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ গণমুখী দল। আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে থাকবে। তাঁর সরকার ও দলের নেতা-কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে গত ১৪ বছরে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে এবং জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবাসহ সব ধরনের পরিষেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।

তাঁর দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনায় দেশবাসী ও জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে চাই।’ আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধনের পর তিনি বলেন, এই কার্যালয়টি তাঁর দলের নীতি ও আদর্শকে তৃণমূলে পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু থাকলে এখান থেকে যারা চিকিৎসাসেবা নেবেন তারা সবাই আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবেন এই ভয়ে ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার দলমত নির্বিশেষে সবার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তা বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, তাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট ছিল। তারা বলেছিল, এই কমিউনিটি ক্লিনিক চালু থাকলে এখান থেকে যারা চিকিৎসাসেবা নেবে তারা সবাই আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। তারা ভোট পাবে না সেই ভয়ে এগুলো বন্ধ করে দেয়। কী অদ্ভুত চিন্তা! আপনারা একটু বিবেচনা করেন। আমরা কিন্তু সেগুলো চিন্তা করিনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে সবাই চিকিৎসা পাবে। যে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে সেও যেমন চিকিৎসা পাবে, যে দেবে না সেও পাবে। কারণ এটা আমি জনগণের জন্য করেছি। আর জনগণের জন্য যে সেবা সেটা জনগণের হাতে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’

২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর থেকে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত সারা দেশে গড়ে ওঠা ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মানুষ চিকিৎসাসেবাসহ ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

সরকারপ্রধান বলেন, পাশাপাশি সে সময় চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৮ হাজার। কিন্তু তাঁর সরকার ৬৭ হাজারে উন্নীত করেছে। ২২ হাজার চিকিৎসক ও ৪০ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, বিভিন্ন আধুনিক হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ বহু চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শিশু হাসপাতালগুলোকে উন্নত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে যুগোপযোগী করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই শিশু হাসপাতাল আমাদের প্রতিটা বিভাগে করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালগুলোতে শিশুদের বিশেষ যত্ন ও চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সে ক্ষেত্রে বেসরকারি পর্যায়েও যেন হাসপাতাল গড়ে ওঠে। এ জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকেও তাঁর সরকার ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছে বলে বেসরকারি খাতে অনেক উন্নত মানের হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি খাতে নার্সেস ইনস্টিটিউট গড়ে উঠছে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রাপ্তির ও উপলক্ষ ঘটছে।’

তিনি এ সময় দেশের জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাইকে নিয়ম মেনে চলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, সবাই যদি নিয়ম মেনে চলে তাহলে আমরা সবাই যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারব।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা তাঁর সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল বলে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার আমরা স্থাপন করছি। একটা ব্যাচ হাসপাতাল রেখে সেখান থেকে এসব সেন্টারে টেলিকমিউনিকেশনের মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই এ সুযোগ আমরা তৈরি করতে পেরেছি।’

সর্বশেষ খবর