শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
ক্ষোভের অনল দুই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে

রাজশাহীতে হলে নৈরাজ্য প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস

রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহীতে হলে নৈরাজ্য প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল মশাল নিয়ে বিক্ষোভ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কৃষ্ণ রায় নামে এক শিক্ষার্থীকে শিবির তকমা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হলগুলোয় ছাত্রলীগের দখলদারি, নির্যাতন ও হুমকি-ধমকির প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের নিপীড়নের প্রতিবাদে অনশনে বসেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান। গতকাল সকাল থেকে কয়েক দফায় ক্যাম্পাসে এসব প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে সম্প্রতি শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে শিবির তকমা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে ওই হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমানসহ কয়েক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।

রাবি ক্যাম্পাসে ওই মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আল-মামুন বলেন, ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে হলগুলো শিক্ষার্থীদের বসবাস উপযোগিতা হারাচ্ছে। হলে নিয়মিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব। আমার ছাত্র কৃষ্ণ রায়কে শিবির তকমা দিয়ে নির্যাতন করতে পিছপা হয়নি ছাত্রলীগ। তারা এখন গুন্ডাতন্ত্রে বিশ্বাসী। অবিলম্বে ক্যাম্পাসে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার রানা বলেন, একটা সিটের মূল্য যদি ১০ হাজার টাকা হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কীভাবে হলে উঠবে? ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কৃষ্ণ, যার বাবা নেই। তাকে রুমে নিয়ে ভয়ংকর নির্যাতন করা হয়েছে। ঘটনার পর এখনো সে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারে না। এ দায়ভার কে নেবে? মানববন্ধনে বক্তব্য দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল বাকী, অধ্যাপক এ বি এম সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসাইন বকুল প্রমুখ। তারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত সব অপকর্মের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের নিপীড়নের প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জোহা চত্বরে অনশনে বসেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান। অনশনকালে অধ্যাপক ফরিদ বলেন, শিক্ষার্থীরা আজ ক্যাম্পাসে পরাধীন। হলে হলে ছাত্রলীগের দখলদারি ও নির্যাতনের ফলে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। চট্টগ্রাম ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও একই চিত্র। এ নৈরাজ্য চলতে দেওয়া যায় না। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

অনশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ফরিদ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার কথা জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, একটা ছেলেকে হলে নৃশংস নির্যাতন করা হচ্ছে, তারা বলে মীমাংসা হয়েছে। অভিযোগ দেওয়ার পর তাকে অভিযোগ তোলার জন্য বাধ্য করা হয়, অথচ প্রশাসন এটাকে বাহবা দেয়। যারা অভিযোগ দিচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি এসব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এর আগে বুধবার রাতে হলে ছাত্র নির্যাতনের প্রতিবাদ ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়ে মশাল মিছিল করেন ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বাম ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে শিবির তকমা দিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। তবে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।

সর্বশেষ খবর