বুধবার, ১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রমাণ মিলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতনের

ছাত্রলীগের ছয়জন জড়িত ইবিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সহসভাপতি অন্তরাসহ অন্তত ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া হল প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্টদের    দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং প্রক্টরের উদাসীনতার কথা উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। রিটের পক্ষে গাজী মো. মহসীন শুনানিতে ছিলেন। পরে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজ দিন রাখেন হাই কোর্ট। পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও আইনের অধীনে প্রণীত বিধি-প্রবিধানমালা সংগ্রহ করে তা দেখাতে এবং ইবির কোনো আইনজীবী থাকলে তাকে জানাতেও বলেছেন আদালত। এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইবির সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট রুল দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ওই নির্যাতনে জড়িত বলে ছাত্রলীগের দুই নেতা সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তাবাসসুমের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে রাখাসহ কয়েক দফা নির্দেশ দেন। তিন সদস্যের কমিটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, জেলা জজ মনোনীত বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপককে রাখতে বলা হয়। কমিটির প্রতিবেদন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে জমা দিতে বলা হয়। এ ছাড়া ওই ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল পৃথক প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় আদালতে দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। পরে আদালতে প্রতিবেদন দুটির অংশবিশেষ পড়ে শোনান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, ফুলপরীকে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী র‌্যাগিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্দেশদাতা এবং ওই পাশবিক, অমানবিক ও ন্যক্কারজনক ঘটনা সংঘটনের হুকুমদাতা। ওই অমানবিক, পাশবিক, ন্যক্কারজনক, জঘন্য ঘটনার সঙ্গে হালিমা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম, মাবিয়া জাহান জড়িত এবং তাদের দ্বারা ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ফুলপরীকে পাশবিক কায়দায় অমানবিকভাবে নির্যাতন করেন। ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তরা নির্দেশ দেন প্রত্যেকে যেন ফুলপরীকে একটা একটা চড় মারেন। আর ফুলপরীর মোবাইল কেড়ে নেন লিমা এবং সবাই অন্তরার পা ধরতে ফুলপরীকে বাধ্য করেন। এ ছাড়া প্রভোস্ট হলে থাকা অবস্থায়ই অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, ঊর্মি, মাবিয়াসহ অন্যরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্তা করেন। একপর্যায়ে তারা প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বরাবর মুচলেকা দিতে বাধ্য করেন তাকে।

সর্বশেষ খবর